সাম্প্রতিক সময়ে উজানি ঢল ও টানা বর্ষণে বিয়ানীবাজারের সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশি এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। এতে প্লাবিত এলাকার ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, হাট-বাজার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়ে দূর্ভোগ বেড়েছে। একইসাথে ঘটছে প্রাণহানিও। গত ৫ দিনে বিভিন্নভাবে দুজনের প্রাণহানিসহ বন্যার পানিতে বৈদ্যুতিক তার থেকে বিদ্যুৎ সংমিশ্রিত হয়ে দুটি গরু ও দুটি শিয়াল স্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে।
গত শনিবার বিকাল চারটার দিকে বাড়ির আঙ্গিনা থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন বৃদ্ধা দিলওয়ারা বেগম (৯০)। অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে স্বজনদের ধারণা উঠোন গা ঘেষে বয়ে যাওয়া সোনাই নদীতে হয়তো তিনি তলিয়ে গেছেন। সারারাত নদীতে নৌকা দিয়ে খোঁজ করেও পাননি। অবশেষে গতকাল রোববার সকাল ৭টার দিকে তাঁর লাশ পাওয়ায় যায় কয়েক কিলোমিটার ভাটিতে সোনাই নদীর বিয়ানীবাজার অংশের তিলপাড়া ইউনিয়নের শানেশ্বর এলাকার।
নিহত দিলওয়ারা বেগম বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের টিকরপাড়া এলাকার শ্রীপুরের বাসিন্দা। তিনি ইউপি সদস্য ইসলাম উদ্দিনের মা।
শনিবার নিখোঁজের পর আশাপাশ এলাকায় মাইক যুগে তার হারিয়ে যাওয়ার সংবাদ প্রচার করা হয়েছিল। রোববার সকাল নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেরা ভাসমান লাশ দেখে ইউপি সদস্য ইসলাম উদ্দিনকে খবর দেন। খবর পেয়ে লাউতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ছেলে ইসলাম উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ সনাক্ত করেন এবং বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের সহযোগিতায় লাশ উদ্ধার করেন।
ইসলাম উদ্দিন বলেন, বাড়ির চারপাশে বন্যার পানি। ঘর থেকে বের হয়ে অসাবধানতা বশতঃ হয়তো সুনাই নদী পড়ে যান। নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় পরিবারের কেউ টের পাননি। সকালে জেলেরা ভাসমান লাশের খবর দেয়।
লাউতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, লাশ উদ্ধারের পর উর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের অনুমতি নিয়ে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মেম্বারের মা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে শনিবার বিকাল থেকে খোঁজাখুঁজি করা হয়। রাতে নদীতে জাল ফেলা হয়েছিলো। কিন্তু নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় বার বার উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের বৈরাগীর খশির এলাকায় ঘরের ভেতরে ভাসমান অবস্থায় এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিন সকালে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি গিয়ে স্ত্রী ও সন্তানরা ঘরের ভেতরের পানিতে বৃদ্ধের ভাসমান লাশ দেখতে পান। পরে স্থানীয়দের সহায়তা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত বৃদ্ধের নাম বাহার উদ্দিন (৬০)। তিনি তিন কন্যা ও দুই পুত্রের জনক ছিলেন। বুধবার রাতে বৈরাগীবাজারের যাওয়ার কথা বলে আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে রাত ৯টার দিকে বের হয়ে যায়।
স্থানীয় অধিবাসী মানিক উদ্দিন বলেন, স্ত্রী সন্তানদের আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে রাতে নিজ বাড়িতে চলে আসেন বাহার উদ্দিন। অনেক বেলা হলেও তিনি আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরে না যাওয়ায় স্ত্রী ছুটে এসে দেখেন ঘরের ভেতরে মেঝেতে তার লাশ ভাসছে। তার ধারণা, ঘরের মধ্যে ঘুমন্ত অবস্থায় কোন এক সময় মেঝেতে থাকা পানিতে পড়ে গেলে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ বিয়ানীবাজার উপজেলায় সৃষ্ট বন্যায় মানুষের পাশাপাশি প্রাণহানি ঘটছে বিভিন্ন ধরনের জীব-জন্তুরও৷ গত শনিবার রাত ৮টার দিকে বিয়ানীবাজার পৌরসভার ফতেহপুর এলাকায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে দুইটি গরু মারা গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভার স্ট্রিট লাইটের খুটি থেকে ডুবে যাওয়া রাস্তার পানিতে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে গরু দুটি ঘটনাস্থলে মারা যায়।
মারা যাওয়া দুইটি গরুর মালিক মাথিউরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন। তিনি শনিবার কানাইঘাটের সড়কের বাজার থেকে পাঁচটি গরু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ক্রয় করেছিলেন। ফতেহপুর গ্রামের সড়ক দিয়ে গরেুগুলো মাথিউরা ইউনিয়নের সুতারকান্দি নেয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় গরুর সাথে থাকা দুই শ্রমিক বিদ্যুৎপৃষ্ট হওয়া থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান। স্থানীয়রা জানান, পৌরসভার স্ট্রিট লাইটের খুটি থেকে গরু দুটি বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়েছিলো।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার দিবাগত পৌরসভার পন্ডিতপাড়া এলাকায় রাস্তায় জমে থাকা পানিতে বিদ্যুতের সংযোগ লাইন থেকে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিদ্যুৎ সংমিশ্রিত পানিতে স্পৃষ্ট হয়ে দুটি শিয়াল মারা যায়।