পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার অন্যতম আসামি জাকারিয়া পিন্টু (৫০) উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছিল। তবে ওই মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ার পর সে আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর থেকে পলাতক ছিল। দীর্ঘ ২৮ বছর পর তাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এই দীর্ঘ সময়ে অন্যান্য মামলায় সে একাধিকবার গ্রেফতার হলেও জামিনে মুক্তি পেয়েছে।
রবিবার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনর এসব তথ্য জানান।
১৯৯৪ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ট্রেনযোগে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে পৌঁছালে সেই ট্রেন লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই ঘটনায় ইশ্বরদী রেলওয়ে থানায় একটি মামলা হয়।
পরে মামলাটির তদন্ত শুরু করে সিআইডি। ১৯৯৭ সালে ৩ এপ্রিল ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। এদের মধ্যে পাঁচ জন মারা গেলে তাদের চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে ৩ জুলাই জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। সেইসঙ্গে ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর মেয়াদ কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘জাকারিয়া পিন্টুর সাজা হওয়ার পর সে আত্মগোপনে চলে যায়। সম্প্রতি সে বুঝতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে খুঁজছে, এরপর সে কক্সবাজারে তার এক বন্ধুর বাড়িতে থাকতে শুরু করে।’
জাকারিয়া পিন্টু দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখছে র্যাব। তার পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল না উল্লেখ করে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল কিনা, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’
২০০৪ সাল থেকে পরিবার নিয়ে ঢাকার মিরপুরে থাকলেও সে নিয়মিত ঈশ্বরদীতে যাতায়াত করতো। খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ২০১৫ সালে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নেয়।’
২০১৯ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা মামলা ছাড়াও আরও একটি মামলায় দণ্ড হয় জাকারিয়া পিন্টুর। অপরটি মামলাটিতে ১৭ বছর কারাদণ্ড হয়েছে তার। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ১৯৮৮ সাল থেকে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। এসব মামলা পর্যবেক্ষণ করে মনে হয় তার সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘তার বালু মহল রয়েছে। সেগুলোর জন্য সন্ত্রাসী বাহিনী তার রয়েছে। এলাকায় তার আধিপত্য রয়েছে। ১৯৮৮ সাল থেকে তার এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রয়েছে। সে যথেষ্ট প্রভাবশালী।’
জাকারিয়া পিন্টু ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদীতে চম্পা হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি এবং ২০০৯ সালে ঈশ্বরদীতে আজম হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাবরণ করে। পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে অস্ত্রসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয় এবং তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে কুষ্টিয়া ভেড়ামারা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। এই মামলায় সে তিন মাস কারাভোগ করলেও পরবর্তী সময়ে জামিনে মুক্তি নিয়ে ফেরারি হয়। উক্ত মামলায় বিজ্ঞ আদালত তাকে ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।
এছাড়াও ২০১২, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে আধিপত্য বিস্তার, বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা দায়ের হয়। এপর্যন্ত তার নামে একটি মৃত্যুদণ্ড ও একটি ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা পরওয়ানা ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধে ছয়টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সর্বমোট ১৯টি মামলা রয়েছে।