গোলাপগঞ্জ কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ভিপি সফিক উদ্দিনের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২২ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টায় উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের কানিশাইল গ্রামে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৫ই জুন গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমি এই নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। আমি ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করে মাধ্যমিকে থাকা অবস্থায় জড়িয়ে পড়ি ছাত্র রাজনীতিতে। পরবর্তীতে কলেজ জীবন থেকে শুরু করে ঢাকাদক্ষিণ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে জি.এস ও ভিপি নির্বাচিত হই প্রত্যক্ষ ভোটে। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল আন্দোলন সংগ্রামে শেখ হাসিনার নির্দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আমি মাঠে অবস্থান করি এবং আমি রাজনৈতিক মারপ্যাঁচের স্বীকার হয়ে কারাবরণ করি বারবার। তখন এই জনপদের মানুষ আমাকে মুক্ত করতে তাদের সর্বস্ব বিনিয়োগ করেন এবং আমাকে মুক্ত করে আনেন। সেই থেকেই আমি এই জনপদের মানুষের কাছে আরো বেশি ঋণ হয়ে পড়ি।
তিনি বলেন, আমি জাতীয় দুর্যোগে এবং বিভিন্ন দুঃসময়ে দলের পাশে এবং এই উপজেলাবাসীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমি দীর্ঘদিন প্রবাসে জীবন যাপন করলেও এই উপজেলাবাসীর পাশে থাকার সবসময় চেষ্টা করেছি এবং তাদের জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা ছিল। বিগত ১৫ই জুনের নির্বাচনে আমি এই গোলাপগঞ্জ উপজেলাকে একটি নান্দনিক ও আধুনিক উপজেলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হই। আমি নির্বাচন করব এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে গোলাপগঞ্জ উপজেলাব্যাপী সাধারণ জনমনে খুশীর জোয়ার বইতে শুরু করে। ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দেয় পুরো উপজেলা জুড়ে। সাধারণ জনতার ভালবাসা নিয়ে আমি মনোনয়ন দাখিল করি। কিন্তু সেই থেকেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং তার কিছু উশৃঙ্খল কর্মী সমর্থক আমার নির্বাচনে বাধা ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে শুরু করে। আমি আমার কর্মী সমর্থকেরা পদে পদে সেই সকল বাধাতে কর্ণপাত না করে নির্বাচন করার জন্য এগুতে থাকি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গাতে আমার ব্যানার, পোষ্টার ছিড়ে ফেলা হয়েছে, আমার কর্মী সমর্থদের উপর হামলা করা হয়েছে। আমি সাথে সাথে সে বিষয়গুলো মৌখিক ভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে জানালেও তার কোন সমাধান বা উত্তর পাই নি। আমি সংজ্ঞাত বা সহিংসতায় না জড়াতে আমার কর্মী সমর্থকদের নির্দেশ দেই এবং সেই দ্বারাতে নির্বাচন করতে প্রচার-প্রচারণা করি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, এই বৃহৎ উপজেলার ১০২টি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী এজেন্ট দিতে সক্ষম হই। কিন্তু নির্বাচনের আগের রাত্রে কালো টাকা ও পেশী শক্তির কাছে আমি ও আমার সমর্থকেরা ধরাশায়ী হই বারবার। দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রায় ভোট কেন্দ্র থেকে আমার নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে টেবিল কাস্ট করা হয় এবং ভোট চুরির মহাউৎসবে মেতে উঠেন নৌকার প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকেরা এমনকি লক্ষীপাশা ইউনিয়নে মুরাদিয়া ছবুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নৌকার প্রার্থী ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে ভোট চুরির বিপ্লব হয়। গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নে আমার ভোটারবৃন্দ ভোট প্রদান করতে গেলে বলা হয় আপনি চলে যান। আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। বাদেপাশা, শরীফগঞ্জ, বাঘা সহ প্রায় সবকটি ইউনিয়নে আমার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয় এবং মারপিট করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, এসব ভিডিও ইতি মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এছাড়াও প্রিসাইডিং এর স্বাক্ষর ছাড়া পুরো ব্যালটের বইয়ে নৌকার সীল মারা হয় যাহার ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যদিয়ে ভাইরাল হয়। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও স্বজনপ্রীতির ফলে নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, সকাল ১১টার পর থেকে এই খবরগুলো আসতে থাকলে আমি প্রশাসনের সকল মহলে বিষয়গুলো জানাই কিন্তু কোন সাড়া পাই নি। আমার মনে হয়েছে সরকার দলীয় প্রার্থী কে প্রশাসন আরোও বেশি সহযোগিতা ও সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। আমি মনে করি এই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছে, হরণ করা হয়েছে মানুষের ভোটাধীকার। শেখ হাসিনার সরকারের উপর মানুষের আস্তার প্রশ্ন উঠেছে। গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। নির্বাচনের নামে এটি একটি তামাশার নির্বাচনে পরিণত করা হয়েছে। আমি এই নির্বাচন ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন যেভাবে আমাকে বলেছিলেন নির্বাচন সুষ্ঠ ও সুন্দর হবে তার ছিটেফুটাও আমার দৃষ্টিগোচর হয় নি। বরং তাদের সামনেই যেভাবে ভোট চুরির বিপ্লব হয়েছে তাদের সহযোগিতায় তা দেখে শুধু আমি বা আমার কর্মী সমর্থকেরা নয় পুরো উপজেলার সুশীল সমাজ হতবাক ব্যতীত হয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় কোন ভোট কেন্দ্রে ভোটার দীর্ঘ কোন সারি দেখা যায়নি তার পরও দিনশেষে গোলাপগঞ্জের ইতিহাসে সর্বচ্চো ভোট চুরির বিপ্লব দেখিয়ে প্রায় ৬৭ হাজার ভোট কাস্ট দেখানো হয়। এটি একটি হাস্যকর নিন্দার বিষয়।
ভিপি সফিক বলেন, ইতি মধ্যেই এই প্রহসনের নির্বাচন বাতিল ও পূণঃনির্বাচন চেয়ে আমি কমিশনের কাছে আবেদন করেছি। তিনি বলেন, এই জনপদের মানুষ আমাকে যেভাবে তাদের হৃদয়ে টেনে নিয়েছেন এবং তাদের পবিত্র আমানত (ভোট) প্রদান করেছেন তাই আমি তাদের কাছে আবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি আজীবন উপজেলাবাসীর সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়ে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।