বন্যার ভয়াবহ রূপ, ত্রাণের জন্য হাহাকার

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এবং অবিরাম বৃষ্টির পানিতে এবং এবং কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে গেছে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার প্রায় সবকটি গ্রাম। ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষ।

সোমবার (২০ জুন) পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার ৮ ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষের বসতঘরে উঠেছে বানের পানি। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, কবরস্থান রয়েছে পানির নিচে। মানুষ এখন আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে ছুটে চলেছেন। বয়াবহ বন্যায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

গত ৪ দিন ধরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ত্রাণের জন্য অপক্ষোয় রয়েছেন পানিবন্দি মানুষ। সরকারি সহায়তা না পৌঁছায় আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দারা ভুগছেন খাদ্য সংকটে। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডাইকের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুশিয়ারা নদীর পানি। প্রায় সবকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

উপজেলা সদরের সাথে সংযুক্ত সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেলে নৌকাই এখন একমাত্র চলার বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু নৌকা পর্যাপ্ত না থাকায় মানুষ বের হতে পারছেন না। অসহায় মানুষের জন্য ২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলার বন্যায় আক্রান্তদের জন্য রোববার নগদ ১ লক্ষ টাকা এবং ৮ মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়। বন্যাক্রান্তদের জন্য ২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র্রে ৭২৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। পানি বন্দি মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে খাদ্যের সংকট। বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকটও দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার সংযুক্ত গোয়ালাবাজার-বালাগঞ্জ সড়ক, বেগমপুর-জগন্নাখপুর সড়ক, বিশ্ননাথ-রাখালগঞ্জ বাজার-ভাড়েরা তাজপুর সড়ক, সৎপুর-ষাইটদা-কাদীপুর-তাজপুর সড়ক, খাদিমপুর-মান্দারুকা-চরইসবপুর-তাজপুর সড়ক, রংগীয়-দুরাজপুর-তাজপুর সড়ক, হস্তিদুর-হরিনগর-কাশিপাড়া-যিয়াফক-তাজপুর সড়ক, বুরুঙ্গা ইউনিয়নের বুরুঙ্গা-ঊনিশমাইল সড়ক, বুরুঙ্গা ইউনিয়নের গ্রামের ভিতরের সবকটি রাস্তা, সাদীপুর ইউনিয়নের কালনীরচর-বাংলাবাজার-চাতলপাড়-নুরপুর, বেগমপুর সড়ক, হলিমপুর-ঊনিশমাইল সড়ক, পঞ্চগ্রাম-ভেড়ারচর বাজার-সুন্দিখলা-সাদীপুর সড়ক, উমরপুর ইউনিয়নের খাদিমপুর নিউ মার্কেট-উমরপুর-গোয়ালাবাজার সড়ক, সিকন্দরপুর-তেরহাতি-গোয়ালাবাজার সড়ক, গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের করনসী রোডসহ গ্রামের ভিতরে অধিকাংশ রাস্তা, দয়ামীর ইউনিয়নের বড় ধিরারাই-নতুনবাজার-কুরুয়া সড়ক, সরিষপুর- দৌলতপুর সড়ক, উছমানপুর ইউনিয়নের বালাগঞ্জ-তাজপুর সড়কের পীরবাজার নামক স্থানে এবং লামাপাড়া-থানাগাঁও বাজার-দয়ামীর বাজার সড়কের কিছু কিছু স্থানে হাঁটু ও উরু পানি রয়েছে। রাস্তায় পানি থাকার কারণে উপজেলার ব্যস্ততম বিপণী কেন্দ্র গোয়ালাবাজারে উমরপুর থেকে আসতে লোকজন নৌকা ব্যবহার করছেন। এমন পরিস্থিতিতে চরম দূূর্ভোগ পোহাচ্ছেন প্রায় উপজেলার লক্ষাধিক বাাসিন্দারা। আশ্রয়ন প্রকল্পের বেশিরভাগ ঘরও পানিতে তলিয়ে গেছে।

উমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মারতি নন্দন ধাম জানিয়েছেন, উমরপুর ইউনিয়নের প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা বন্যাক্রান্ত রয়েছে। ত্রাণ সহায়তার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়ছে।

তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অরুনোদয় পাল ঝলক বলেন, তাজপুর ইউনিয়নের ৬৫ ভাগ এলাকা পানিবন্দি রয়েছে। আমার নিজ উদ্যোগে বন্যাক্রাদের মধ্যে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করছি। সরকারি ত্রাণ হিসাবে তাজপুর ইউনিয়নে একটন চাল এসছে জেনেছি। তা সঠিক ভাবে বন্ঠন করা হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন কান্তি রায় বলেন, সরকারি উদ্যোগে ৮ টন চাল ও নগদ ১ লাখ টাকা ত্রান সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রানের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে।