সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা হেরোইন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতে মাদক কারবারিরা ব্যবহার করছে বয়স্কদের। সম্প্রতি কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের একাধিক অভিযানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জানা গেছে, বয়স্করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে যেতে পারে সহজে। এতে তারা জড়িয়ে পড়ছে হেরোইন সরবরাহের পেশায়। পুরুষদের পাশাপাশি বৃদ্ধারাও আছেন এই সিন্ডিকেটে।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট জানিয়েছে, রাজধানীর শাহবাগ থানার শাহ মাজার এলাকায় গত সোমবার (১৩ জুন) অভিযানে ২০০ গ্রাম হেরোইনসহ ৫৮ বছর বয়সী শাহানুর ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার চলাফেরা ও পোশাক দেখে কেউ তাকে মাদক বহনকারী বলে সন্দেহই করবে না। কিন্তু তিনি গত এক বছর ধরে ভারত থেকে রাজশাহী সীমান্ত হয়ে আসা হেরোইন সংগ্রহ করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিতেন।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতারকৃত শাহানূরের বরাতে সিটিটিসি কর্মকর্তারা বলেন, তার চালানের প্রতি প্যাকেটে ১০০ গ্রাম হেরোইন থাকতো। ১০০ গ্রাম প্যাকেট পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা পেতেন তিনি। মাসে প্রায় ৩ থেকে ৪টি চালান রাজশাহী থেকে দেশে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিতেন শাহানুর।
শাহানুর সিটিটিসি কর্মকর্তাদের জানান, গত বছর আমের মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম এনে রাজধানীতে বিক্রি শুরু করেন। এতে তার বেশ লোকসান হয়। সেই আমের ব্যবসায়ীরাই তাকে হেরোইন সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। পরে সেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। তাদের কাছ থেকে হেরোইন নিয়ে অন্য জায়গায় পৌঁছে দিতাম।
আটককৃত শাহানুরের ডায়াবেটিস আছে। সে কারণে ব্যাগে ইনসুলিন রাখতো। সঙ্গে থাকতো বিস্কুটের একাধিক প্যাকেট। এসব প্যাকেটেই মাদক বহন করতেন তিনি।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদে রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গাযর হেরোইন সিন্ডিকেটের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এই চক্রে অন্তত ১২ থেকে ১৫ জন সদস্য জড়িত বলে জানা গেছে।
তারা আরও জানান, মিরপুরে এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন এক নারী।
গ্রেফতারের পর শাহানুরের রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে আদালত জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে আরও তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে মনে করছেন অভিযান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ইকোনমিক ক্রাইম অ্যান্ড হিউম্যান ট্রাফিকিং টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে হেরোইন ব্যবসায়ীরা বয়স্কদের টার্গেট করছে ক্যারিয়ার হিসেবে। তারা ধারণা করছে যুবকদের চেয়ে বৃদ্ধদের শনাক্ত করা কঠিন। কিন্তু হেরোইন ব্যবসায়ে জড়িত ও বহনকারী অনেককেই গ্রেফতার করেছি।
তিনি আরও বলেন, কারা ভারত থেকে রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে হেরোইন নিয়ে আসছে, তাদের বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। সে অনুযায়ী অভিযান চলছে।