পাকিস্তানের অন্যতম প্রখ্যাত এবং বিতর্কিত টিভি উপস্থাপক আমির লিয়াকত হোসেন ৫০ বছর বয়সে মারা গেছেন। করাচির নিজ বাড়িতে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়ার পর হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে।
টিভি উপস্থাপনা থেকে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন আমির লিয়াকত হোসেন। ইমরান খানের পিটিআই দল থেকে আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ক্যারিয়ার জুড়ে বিতর্ক তৈরি করেছেন আমির। টিভি অনুষ্ঠানে নিঃসন্তান দম্পতিকে সন্তান দিয়ে প্রশংসায় ভেসেছেন আবার ঘৃণাবাদী বক্তব্য ছড়ানোয় নিষিদ্ধও হয়েছেন।
স্পষ্টভাষী এই উপস্থাপকের ব্যক্তিগত জীবনও জনসাধারণের আগ্রহের বিষয়বস্তু ছিল। তার নানা কার্যকলাপ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত হয়েছে।
জীবনের শেষ অধ্যায়ে আমির লিয়াকত হোসেন তৃতীয়বারের মতো বিয়ে করেছিলেন। তবে কয়েক মাসের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধের মধ্য দিয়ে সেই বিয়ের অবসান হয়। মে মাসে তার ১৮ বছর বয়সী স্ত্রী দানিয়া শাহ তালাকের নোটিশ দেন। আমিরের বিরুদ্ধে পারিবারিক নিপীড়ন এবং মাদকাসক্তির অভিযোগ আনেন তার স্ত্রী।
পরবর্তীতে এক ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে আমির ওই বিয়েকে ‘ব্যর্থতা’ দাবি করে অভিযোগগুলোকে ফেইক নিউজ আখ্যা দেন। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে চলা সমালোচনায় আহত হওয়ার কথা জানিয়ে পাকিস্তান ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানের শীর্ষ মিডিয়াগুলোতে কাজ করেছেন আমির লিয়াকত হোসেন। জনগণের একটি অংশের কাছে তিনি নিঃসন্দেহে জনপ্রিয় ছিলেন তবে অনেকেই তাকে বিতর্কিত মনে করতেন।
একজন বাকপটু বক্তা এবং একজন দুর্দান্ত শোম্যান যিনি রেটিং নিশ্চিত করতে পারতেন। শোগুলোতে ভাল স্ক্রিপ্টের পাশপাশি ধর্মীয় উপদেশও অন্তর্ভুক্ত থাকতো – সেইসাথে ঘন ঘন গালাগালি। শোতে আমন্ত্রিতরা তার বিরুদ্ধে লজ্জা দেওয়ার অভিযোগ আনতেন। তিনি আমন্ত্রিতদের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি, বিশ্বাসঘাতকতা বা ব্যভিচারের মতো কাজের জন্য অভিযুক্ত করতেন।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে আমির লিয়াকত হোসেন আহমদিয়া মতালম্বীদের পুরো একটি শো পরিচালনা করেন। এই শোতে দুই স্কলার বলেন, ভুয়া নবীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ‘খুন করা যায়’। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিন্ধ প্রদেশের মিরপুর খাস শহরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক প্রখ্যাত সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
পাকিস্তানের স্বাধীনচেতা নারীদের নিয়ে যৌনতাবাদী মন্তব্যের পরিচিত ছিলেন আমির লিয়াকত হোসেন। শিল্পী, লেখক কিংবা মানবাধিকার কর্মীরা প্রায়ই তার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন।
কুইজ শো পরিচালনা করে গাড়ি, মোটরসাইকেল, বাসাবাড়ির ইলেক্ট্রিক পণ্য উপহার দিতেন আমির লিয়াকত হোসেন। এমনকি পরিত্যক্ত শিশুদের উপহার হিসেবেও দিয়েছেন তিনি। ওই সময়ে তিনি দাবি করেন এই পদক্ষেপের লক্ষ্য শিশুদের একটি উন্নত জীবন পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া, রেটিং বাড়ানো নয়।
২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন আমির লিয়াকত হোসেন। ওই সময় তাকে এমকিউএম পার্টি বহিষ্কার করে। ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের মন্ত্রিসভায় ধর্মমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
২০১৮ সালে আবার রাজনীতিতে ফেরেন আমির লিয়াকত হোসেন। তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টিতে যোগ দিয়ে পরের বছর পার্লামেন্ট সদস্য হন তিনি।
সূত্র: বিবিসি