‘সীতাকুন্ডে শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ীদের শাস্তি দিতে হবে’

সীতাকুন্ডে বি.এম. কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক মৃত্যু এবং চার শতাধিক আহত হওয়ার জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার, বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচীর অংশ হিসাবে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে সোমবার (৬ জুন) বিকাল সাড়ে ৫টায় আম্বরখানাস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক আবু জাফরের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক প্রনব জ্যোতি পালের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- শ্রমিক ফ্রন্ট নেতা শহীদ মিয়া, শফিকুল ইসলাম কাজল, চালক সংগ্রাম পরিষদের মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মনজুর আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ আলী, চা শ্রমিক ফেডারেশনের সন্দিপ রঞ্জন নায়েক, নির্মাণ শ্রমিক ফ্রন্ট এর সাধারণ সম্পাদক মামুন বেপারি, জাকির হোসেন,আমিন আহমেদ, ইমরান আহমদ প্রমুখ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, যে সময়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলন চলমান এবং সেখানে প্রধান আলোচ্য বিষয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, সেই সময় সীতাকুন্ডের বি.এম কনটেইনার ডিপোয় অগ্নিকান্ড এবং বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক মৃত্যু এবং চার শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী, উদ্ধারকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তাহীনতার চিত্রটি আবার সামনে এনেছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৯০ সালে সাড়াকা গার্মেন্টস থেকে কর্মক্ষেত্রের মৃত্যুর যে মিছিল শুরু হয়েছে শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মালিকদের অত্যধিক মুনাফালিপ্সা, রাষ্ট্রের মালিক তোষণ নীতি, এবং আইন বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাদের কর্তব্য অবহেলা আর দুর্নীতির কারণে প্রাণহানির সেই মিছিল আর থামছেনা। জীবিকার জন্য এসে হাজার-হাজার শ্রমিকের জীবন হারানোর কারণে কোনো মালিক বা সংশ্লিষ্ট কোনো সরকারী কর্মকর্তা কে শাস্তি পেতে হয়নি। একটি পরিবারের স্বপ্ন কে পুড়িয়ে দিয়েও মাত্র ২ লক্ষ টাকা দিয়ে মালিক দায় থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি আর শিল্পের উন্নয়নের জন্য সকল ধরণের পণ্যের দাম বেড়েছে শুধু শ্রমিকের শ্রম আর জীবনের দাম বাড়েনি।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বি.এম. কনটেইনার ডিপোর মালিক কর্তৃপক্ষ একদিকে ক্যামিকেল মজুদ করার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা আয়োজন করেননি অপরদিকে তথ্য গোপন করেছেন ফলে কনটেইনার বিস্ফোরণে এই মৃত্যুর জন্য অবশ্যই মালিক কর্তৃপক্ষ দায়ী। আর ঠিকাদারি প্রথা বা আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে শ্রমিক নিযুক্ত করায় এই শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা প্রশ্নে দরকষাকষির সুযোগ ছিলনা। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ সংশ্লিষ্ট আই.এল.ও কনভেনশন সমূহ অনুস্বাক্ষর করেনি যা নিরাপদ কর্মক্ষেত্র বা কর্ম পরিবেশ নিরাপদ করার জন্য সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন করা যায়। নেতৃবৃন্দ, বি.এম. কনটেইনার ডিপোয় বিস্ফোরণে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে আই.এল.ও কনভেনশন ১২১ অনুসারে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ এবং আহত প্রত্যেককে সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান।

নেতৃবৃন্দ, কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুতে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং আই.এল.ও কনভেনশন ১২১ ও ১৫৫ এর আলোকে ক্ষতিপূরণের বিধান রেখে শ্রম আইন সংশোধন করার দাবি জানান।

নেতৃবৃন্দ, মিরপুরে আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকদের উপর নিপীড়ন বন্ধ করে তাদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া, চা শ্রমিকদের দৈনিক নগদ মজুরি ৫শত ঘোষণা করা এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাটারি চালিত যানবাহন চলাচলে লাইসেন্স প্রদানের আহ্বান জানান।