সুনামগঞ্জের ধোপাজান চলতি নদী থেকে গত তিন মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বালু ও পাথর লুট হয়েছে। সেই বালু পাথর লুট বন্ধে পুলিশ ভিন্ন কায়দায় নদীর প্রবেশ মুখে ব্যারিকেড দিয়েছে।
কীভাবে এই নদী রক্ষা করা যায় এবং জেলার বিভিন্ন নদীতে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধে সোমবার (২৮ অক্টোবর) সাড়ে ১১টায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির হলরুমে অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দিকী।
মতবিনিময় সভায় সুনামগঞ্জ জেলা ও পুলিশ প্রশাসন নদী লুটের সঙ্গে জড়িত অভিযোগ তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সভায় তারা পুলিশ সুপারের (এসপি) পদত্যাগ দাবি করেন। এতে সভায় হট্টগোল বেধে যায়। সেখানে এক সমন্বয়ক দাবি করেন, ‘দেশের যেকোনও উপদেষ্টাকে নামাতে শিক্ষার্থীদের মাত্র ২৪ ঘণ্টা যথেষ্ট।’
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সুনামগঞ্জের ধোপাজান চলতি নদীতে হঠাৎ ড্রেজার লাগিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন শুরু হয়। দফায় দফায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি অভিযান চালিয়ে এই অবৈধ বালু ও পাথর লুট বন্ধ করতে পারেনি।
ফলে গত শুক্রবার বিকালে সুনামগঞ্জ সদর থানার উদ্যোগে মানুষের চলাচলের রাস্তা রেখে নদীর প্রবেশ মুখে বড় তিনটি ব্যারিকেড দেয়। এতে বন্ধ হয় লুট। পরে গত দুই দিনে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে লুটের সঙ্গে জড়িত মূলহোতা বাবুল ও নিজামকে গ্রেপ্তার করে।
তবে পুলিশ সুপারের দাবি, নদী লুটের সঙ্গে যে পুলিশ সদস্যরা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টায় সভা শুরু হলেও সেখানে জেলার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বক্তব্য রাখেন।
তবে দুপুর ২টায় সভায় হঠাৎ সুনামগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের সময় বাধে বিপত্তি। সেখানে শিক্ষার্থীরা সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জেলার পুলিশ প্রশাসনের যোগসাজশে চলতি নদী লুট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। পরে সভাকক্ষে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার আফম আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগের দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
এক পর্যায়ে উত্তাল হয়ে পড়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভা হল। সভায় উপস্থিত থাকা বিভাগীয় কেন্দ্রীয় দুই সমন্বয়ক মাইকে ঘোষণা দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক আবু নাসিম বলেন, যে অন্যায় করবে, শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে কথা বলবে। দেশের যেকোনো উপদেষ্টাকে নামাতে শিক্ষার্থীদের মাত্র ২৪ ঘণ্টা যথেষ্ট।
তবে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার আফম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি এই জেলায় নতুন যোগদান করেছি। নদী লুটের সঙ্গে যে পুলিশ সদস্যরা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দিকী বলেন, ‘সুনামগঞ্জের নদী লুট বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা নদী লুটের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইজারা দেওয়া বালু মহালগুলোতে বালি আছে কি না তা আবারও খতিয়ে দেখা হবে। যারা বালু লুট করেছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’