‘৩২ বছরে কমেছে ৮৭ শতাংশ হাওর’

৩২ বছরে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত জেলায় হাওরের ভূমির পরিমাণ কমেছে ৮৭ শতাংশ।

শুক্রবার (২৪ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত ‘হাওর এলাকার ভূমি ব্যবহারের কয়েক দশকের পরিবর্তন ও এবারের ব্যাপকতা’ শীর্ষক সংলাপে এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান।

প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, জলাভূমির পরিবর্তন জীব-বৈচিত্র্যে তাৎপর্যমূলক প্রভাব ফেলছে যা উপেক্ষা করা অনুচিৎ। আগের বছরগুলো থেকে বর্তমানে বন্যার ভয়াবহতা আরও বেশি হওয়ার কারণ অতিরিক্ত অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ। ১৯৮৮ সাল থেকে হাওরের ভূমি প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগ হ্রাস পায় এবং ৪ ভাগ জমিতে অবকাঠামো তৈরি হয়। যার ফলে হাওরের পানিধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি আরও বলেন, হাওর রক্ষা, পুনরূদ্ধার, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভূমি পরিদর্শন, প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা এবং মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে হাওর কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব। বাংলাদেশের হাওর এলাকার ভূমি রক্ষা করা ছাড়া উন্নয়ন অসম্ভব। সরকারের উচিৎ বিশ্লেষণ করে রাষ্ট্রের সঠিক উদ্যোগ নেওয়া, কারণ দুর্বৃত্তকে নিবৃত করা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইনজামাম উল হক রিফাত ও মারিয়া মেহেরিন ২০২১ সালের মার্চ মাসে ৩৭৩টি হাওর নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণায় ১৯৮৮, ২০০৬, ২০১৩ ও ২০২০ সালের স্যাটেলাইট ইমেজ ক্লাসিফিকেশনের মাধ্যমে তথ্য- উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন তারা।

গবেষণার ফলাফলে জানা যায়, বর্তমানে সিলেটে সর্বোচ্চ ১০৫টি ও মৌলভীবাজারে সর্বনিম্ন ১৪টি হাওর রয়েছে। ১৯৯৮ সালকে ভিত্তি ধরে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন তারা।

উন্মু্ক্ত আলোচনায় আইপিডির পরিচালক পরিকল্পনাবিদ আরিফুল ইসলাম বলন, এবারের বন্যার জন্য দায়ী আন্তঃনদী সংযোগ, নদীর প্রবাহ পথের পরিবর্তন, পলি জমা ও ধারণ ক্ষমতার ক্রম-অল্পতা। আমাদের উৎকণ্ঠার জায়গা, উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু এর স্থায়িত্বকাল কতটুকু তা নিয়ে। ভৌগলিক অবস্থান ভেদে হাওর অঞ্চলের জন্য পরিকল্পনা একরকম হবে আর উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য পরিকল্পনা অন্যরকম। এক্ষেত্রে আগে সিদ্ধান্ত পরে পরিকল্পনা বা কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে অন্যথায় এরকম অবস্থা পরিবর্তন সম্ভব নয়।

চৌধুরী মো. যাবের সাদেক বলেন, হাওর অঞ্চলের বর্তমান আয়তন যাতে আর ১ শতাংশও না কমে তার জন্য ডিজিটাল মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পরপর ইমেজ অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে এর পরিবর্তন বোঝা যায় এবং সে অনুসারে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারে। ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট, সরকারি আইন ও বিধানের মাধ্যমে আমাদের হাওর অঞ্চল সংরক্ষণে সচেষ্ট হতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পরিকল্পনাবিদ ফরহাদুর রেজা বলেন, এবারের বন্যার কারণ যদিও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সর্বোচ্চ কতটুকু বৃষ্টি হতে পারে তার একটা সম্ভাব্য প্রজেকশন ও কোর হাওর এরিয়া জানা থাকলে এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ মোকাবিলা আমাদের জন্য সহজতর হবে। হাওর এরিয়ার জন্য সেখানে কতটুকু রোড দরকার, ডিমান্ড অ্যানালাইসিস ও ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে ইনট্রিগ্রেটেড পদ্ধতিতে মাস্টার প্ল্যান তৈরির করে সেখানকার অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব।