৩০০ টাকা মজুরি না হলে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে

চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা।

শনিবার (১৩ আগস্ট) মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগান সহ দেশের ১৬৭ টি চা বাগানের শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করে।

সকাল থেকে জেলার রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী, কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা চা পাতা উত্তোলন ও চা ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগ না দিয়ে আঞ্চলিক মহা সড়ক ও ফ্যাক্টরি এলাকায় তাদের ন্যায্য দাবী আদায়ের লক্ষে অবস্থান নেন।

দুপুরে কুলাউড়া উপজেলার হিংগাজিয়া চা বাগান, লোহাইনি চা বাগান সহ উপজেলার সবকটি চা বাগান থেকে আঞ্চলিক মহা সড়কে নেমে আসেন শ্রমিকরা৷ মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন জায়গায় চা-শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেছেন। ফলে লুহাইউনি ও ব্রাক্ষণবাজারসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।

একই সময় রাজনগরের মুন্সিবাজার ও উত্তরভাগ বাজারে চা শ্রমিকদের পৃথক দুইটি বড় মিছিল বের হয়ে তারা রাস্তায় অবস্থান নেন। দীর্ঘসময় বন্ধ থাকে যানবাহন চলাচল।

লুহাইনি চা বাগানের চা শ্রমিক সন্তান বাবলু বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত স্রোতের মতো ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেক পরিবার তিন বেলা খেতে পারছে না। খাবেই কি করে ১২০ টাকা দিয়ে দুই কেজি চাল কিনলেই শেষ। পরিবারে ছেলে-মেয়ে নিয়ে ৪-৫ জন হলে কষ্টের শেষ নেই। সন্তানদের পড়ালেখা করানোর জন্য নিজের ফসলি জায়গা অনেক পরিবার বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে আরও অসহায় হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। ৩০০টাকা মজুরি করা হয় যেন এটাই আশা করছি।

সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সভায় কুলাউড়া উপজেলার হিংগাজিয়া চা বাগানের চা শ্রমিক নেতা রূশিকুমার গোয়ালা তার বক্তব্যে বলেন, পাকিস্তান আমলে ব্রিটিশরা আমাদের ভারত থেকে এনেছিল, বলেছিল এখানে নাকি গাছ নাড়ালে টাকা পড়ে। সেই সময় ব্রিটিশরা আমাদের শাসন-শোষণ করেছিল এখনো হয়েই যাচ্ছি। বাংলাদেশে এমন কোন কাজ নাই যেখানে কাজ করে মাত্র ১২০ টাকা মিলে। তাহলে আমাদের কেন ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে রাখা হচ্ছে?

জুড়ী উপজেলার সাগরনাল চা বাগানের বর্তমান মেম্বার প্রদীপ যাদব বলেন, মালিক পক্ষের সঙ্গে চা-শ্রমিকদের আলোচনা প্রায় ১৯ মাস ধরে চলছে। কিন্তু এর কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। চা শ্রমিকের নুন্যতম মজুরি ৩০০ টাকা দিতে হবে এবং চা শ্রমিকের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনতিবিলম্বে করতে হবে। ১২০ টাকা মজুরি কোনভাবেই মেনে নেওয়ার মতো না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ১২০ টাকা মজুরি থাকলে অনেকে না খেয়েই মারা যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি বাগানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভরা চায়ের মৌসুমে প্রতিদিন কর্মবিরতিতে চা শ্রমিকরা থাকলে চায়ের ব্যাপক ক্ষতি হবে ফলে দেশ আয়ের সচ্ছলতা হারাবে। এর জন্যে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নিয়ে সমাধান করে আবার পুনরায় চা শ্রমিকরা যাতে কাজে ফিরে সেই ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন তারা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট শাখার সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, আমরা কাজ করে কাজের ন্যায্য মজুরি পাচ্ছিনা, তাহলে কাজ করে কি লাভ। আমাদেরকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। একপক্ষকে কেন চিঠি দেওয়া হচ্ছে, অপর পক্ষকে দিলে এবং তারা যদি মজুরি বাড়িয়ে দেয় তাহলে সমাধানে চলে আসবে। যতদিন পর্যন্ত মজুরি না বাড়ছে আমাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।