২১ শিল্প প্রতিষ্ঠানের ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড অর্জন

‘ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি এন্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ পেয়েছে ৬ ক্যাটাগরিতে ২১ শিল্প প্রতিষ্ঠান। জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান, প্রণোদনা সৃষ্টি এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা, বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। খবর বাসসের।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন আজ রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির মাল্টিপারপাস হলরুমে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। তিনি শিল্প মালিক ও প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ প্রদান করেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এনপিও’র মহাপরিচালক মুহম্মদ মেসবাহুল আলমের সভাপতিত্বে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম। পুরস্কার প্রাপ্তদের পক্ষ থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করবেন বায়োফার্মা লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লকিয়ত উল্লাহ্।

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত শিল্পায়ন আর শিল্পায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে উৎপাদনশীলতা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহ শিল্প ও সেবা খাতে উৎপাদনশীলতার প্রসার ঘটিয়ে জনগণের জীবন মানের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এনপিও বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন খাত, উপ-খাত এবং শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে যুগোপযোগী কলাকৌশল সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ, সেমিনার, কর্মশালা, পরামর্শ সেবা ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছে।

মন্ত্রী বলেন, জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে শিল্পখাতের অবদান ক্রমবর্ধমান রাখতে শিল্প মন্ত্রণালয় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। শিল্পখাতকে বিশ্ব পর্যায়ে প্রতিযোগিতা সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে প্রযুক্তিভিত্তিক, উচ্চ অগ্রাধিকার শিল্প সৃষ্টি, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন প্রক্রিয়া, সুসংহত ব্যক্তিখাত গড়ে তোলাসহ পণ্যের গুণগতমান উন্নয়ন, এসএমই খাতের উন্নয়ন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্ট লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

মন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র শিল্পসহ অন্যান্য উদ্যোক্তাদের আর্থিক সুবিধা ও স্বল্পসুদে ঋণপ্রদান, পণ্য বহুমুখীকরণ, মূল্য সংযোজনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি, অবকাঠামো উন্নয়নসহ শিল্প কারখানার সংস্কার, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও শিল্পপণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই শিল্পায়নের প্রসারের মাধ্যমে জিডিপিতে শিল্পখাতের অংশ বৃদ্ধিতে শিল্প মন্ত্রণালয় সদা সচেষ্ট।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বর্তমান সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর এজন্য নতুন বাজেটে প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মূল্যেস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে এ বছরের শেষে মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে মর্মে আমি আশাবাদী। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন সময়মতো জ্বালানি ও সারের জোগান নিশ্চিতকরণ। আমরা এক্ষেত্রে আমদানির পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করেছি।

তিনি বলেন, দেশের শিল্প ও সেবা ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও উৎপাদিত পণ্যের উৎকর্ষতা সাধনের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ‘ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি এন্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ এবং ‘ইনস্টিটিউশনাল এপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ প্রদান করা হয়েছে। মন্ত্রী এসময় পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত উদ্যোক্তা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের উষ্ণ অভিনন্দন জানান এবং রাষ্ট্রীয় এ স্বীকৃতি শিল্প-কারখানায় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও উৎকর্ষতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের দপ্তর ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) এশিয়ান প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এপিও), টোকিও, জাপান এর সহযোগিতায় ন্যাশনাল প্রোড্রাক্টিভিটি মাস্টার প্ল্যান ফর বাংলাদেশ ২০২১-২০৩০”প্রণয়ন করেছে, যা বাস্তবায়িত হলে উৎপাদনশীলতার গড় প্রবৃদ্ধি ৩.৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫.৬ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব নয়।

‘ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি এন্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ পেয়েছে ৬টি ক্যাটাগরির খাত ও উপখাত ভিত্তিক ২১টি শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান। এরই অংশ হিসেবে বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে তৈরি পোশাক উপখাতে ১ম, ২য় ও ৩য় হয়েছে যথাক্রমে ইকোটেক্স লিমিটেড, ফকির ফ্যাশন লিমিটেড এবং স্কয়ার ফ্যাশন্স লিমিটেড; টেক্সটাইল উপখাতে ১ম, ২য় ও ৩য় হয়েছে যথাক্রমে গ্রীন টেক্সটাইল লিমিটেড, ফোর এ ইয়ার্ন ডায়িং লিমিটেড এবং মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস লিমিটেড; খাদ্য ও পানীয় উপখাতে ইস্পাহানি টি লিমিটেড এবং ঔষধ ও রসায়ন উপখাতে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে নুভিস্তা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড; ইস্পাত, প্রকৌশল ও সেবা শিল্প উপখাতে ১ম ও ২য় হয়েছে যথাক্রমে বঙ্গ বিল্ডিং মেটেরিয়াল লিমিটেড এবং মাল্টিলাইন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে তৈরী পোশাক উপখাতে ১ম ও ২য় হয়েছে যথাক্রমে এফ জি এস ডেনিম ওয়্যার লিমিটেড এবং শান্তা এক্সপ্রেশন্স লিমিটেড লিমিটেড, ঔষধ উপখাতে ১ম ও ২য় হয়েছে যথাক্রমে বায়োফার্মা লিমিটেড এবং গেট ওয়েল লিমিটেড; ইস্পাত ও প্রকৌশল উপখাতে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বঙ্গ প্লাস্টিক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।

ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম, ২য় ও ৩য় হয়েছে যথাক্রমে শেলটেক হোল্ডিংস লিমিটেড, রংপুর ফাউন্ডি লিমিটেড এবং আদজি ট্রিমস লিমিটেড।

মাইক্রো শিল্প, কুটির শিল্প ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে যথাক্রমে মাসকো ডেইরী এন্টারপ্রাইজ, রূপকথা ফ্যাশন এবং কেরু অ্যান্ড কোম্পানী (বাংলাদেশ) লিমিটেড। অন্যদিকে ‘ইনস্টিটিউশনাল এপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ পেয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।

উল্লেখ্য, ‘ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি এন্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ও ইনস্টিটিউশনাল এপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড নীতিমালা, ২০২০’ অনুযায়ী ‘ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি এন্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ এবং ‘ইনস্টিটিউশনাল এপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ প্রদান করা হয়েছে।