সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজসহ দেশের ১০টি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য ১৯টি হোস্টেল নির্মাণ করতে চায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এজন্য ১ হাজার ২১২ কোটি ৬৭ লাখ চাওয়া হয়েছে সরকারের কাছে। তবে এই টাকায় কত তলাবিশিষ্ট হোস্টেল নির্মাণ করা হবে, ভবন নির্মাণের মাধ্যমে প্রত্যেকটি মেডিকেল কলেজে কতজনের আবাসনের ব্যবস্থা হবে তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। এছাড়া এসি, টিভি, আসবাবপত্রের দাম নিয়েও রয়েছে অসঙ্গতি। বিষয়গুলো নজরে এনে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ।
কমিশন বলছে, প্রস্তাবিত মেডিকেল কলেজগুলোতে কততলা ভিতবিশিষ্ট কয়টি হোস্টেল ভবন নির্মিত হবে, মেডিকেল কলেজগুলোতে কতজন ছাত্র-ছাত্রীর আবাসন সুবিধা রয়েছে এবং আবাসন চাহিদা কতজনের, প্রকল্পের আওতায় হোস্টেল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে প্রত্যেকটি মেডিকেল কলেজে কতজনের আবাসনের ব্যবস্থা হবে- এসব তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে হবে।
আবার ছাত্রী হোস্টেলে আবাসন সংকটের তুলনামূলক চিত্র থেকে দেখা যায়, কিছু মেডিকেল কলেজ, যেমন- কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি আসনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত ওই প্রকল্প পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায়, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্র হোস্টেলের জন্য একটি বোর্ডের মূল্য ৬ হাজার ২৫০ টাকা ধরা হয়েছে। ছাত্রী হোস্টেলের জন্য একই বোর্ডের মূল্য ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৮৫৫ টাকা। প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের জন্য প্রতিটি এসির (২ টন) মূল্য ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। আবার হোস্টেল ভবনের জন্য ওই একই এসির মূল্য ধরা হয়েছে এক লাখ টাকা।
এসব নিয়ে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, একই টনের, একই মানের এসির দাম কখনো দুই ধরনের হতে পারে না। প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের জন্য এসির (২ টন) একক মূল্য ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ধরা হলো। অথচ একই জিনিস হোস্টেলের জন্য দাম এক লাখ টাকা ধরা হলো। এটা হতে পারে না। এছাড়া আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব ঠিক করে পরিকল্পনা কমিশনে পুনরায় প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরকে।
তিনি আরও বলেন, শুধু এসি নয়। আমাদের চোখে আরও কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। সবকিছু প্রকল্পে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিষয় সংশোধন করলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
একই ধরনের এসির দুই ধরনের দামের বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, পিইসির (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসির দাম ঠিক করে দেবো। পিইসির সব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পটি পুনরায় ঠিক করে দেওয়া হবে।
ওই প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ১ হাজার ২১২ কোটি ৬৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৬ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ১০টি মেডিকেল কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ১৯টি হোস্টেল নির্মাণ করা হবে বলে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে।
কততলা ভিতবিশিষ্ট কততলা ভবন নির্মাণ করা হবে তা নির্দিষ্ট না হলেও ১০টি ছাত্রী হোস্টেল এবং ৯টি ছাত্র হোস্টেল করা হবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে। ১০টি হোস্টেলে ৪ হাজার ৪২৩ জন ছাত্রী এবং ৯টি ছাত্র হোস্টেলে ৪ হাজার ৫১২ জন ছাত্রের আবাসন ব্যবস্থা হবে।
হোস্টেল নির্মাণের ফলে মেডিকেল কলেজগুলোতে মোট কতজন ছাত্র-ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা হবে সে সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য সংযোজন করা হয়নি বলে দাবি কমিশনের। প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মিত হবে বিধায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
কমিশন বলছে, প্রস্তাবিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সুনির্দিষ্ট স্পেসিফিকেশনসহ উল্লেখ প্রয়োজন। প্রতিটি টিভির (৪৯ ইঞ্চি) একক মূল্য ধরা হয়েছে এক লাখ টাকা। কীসের ভিত্তিতে এই ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে তা জানতে চেয়েছে কমিশন। হোস্টেল ভবনগুলোর জন্য আসবাবপত্র খাতে ব্যয় প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এরও যৌক্তিকতা স্পষ্ট নয়। কারণ প্রকল্পের আওতায় মূল্য সংযোজন খাতে ১০ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সব পৃষ্ঠায় বাস্তবায়নকারী সংস্থার স্বাক্ষর ও সিল নেই।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে বিদ্যমান ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ১৩টির আবাসিক ব্যবস্থা অত্যন্ত পুরোনো ও জরাজীর্ণ। এসব মেডিকেল কলেজে প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বাড়লেও হোস্টেলে সিট সংখ্যা সে অনুপাতে বাড়েনি। ফলে পুরোনো ছাত্রাবাসগুলোতে প্রয়োজনীয় স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এতে ছাত্রছাত্রীদের বসবাসের সমস্যা উত্তরোত্তর প্রকট হচ্ছে ।
ডিপিপি থেকে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত ১০টি মেডিকেল কলেজ বেছে নেওয়া হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজ ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। বর্তমানে এসব মেডিকেল কলেজে ছাত্র ৭ হাজার ৫৩৯ এবং ছাত্রী ৭ হাজার ৭৫৬ জন। এসব মেডিকেলে ছাত্রদের জন্য ৪ হাজার ৩২০ এবং ছাত্রীদের জন্য বিদ্যমান আসন সংখ্যা মাত্র ৪ হাজার ৫৭৪টি।
প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৪০ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আবাসিক ভবনে ১ হাজার ৩৪ কোটি, ৮৯টি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহে ১১৫ কোটি ২১ লাখ, ৩১ হাজার ১৩৯টি আসবাবপত্র সংগ্রহে ৩৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ৯ হাজার ৪৯০টি নানা সরঞ্জামাদি সংগ্রহে ১ কোটি ৭৬ লাখ, একটি জিপ কেনা বাবদ ৫৭ লাখ টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র : জাগো নিউজ