নীলফামারী সদর ও জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল প্রদানের কার্ড নবায়ন ও ডাটাবেজ তৈরি বাবদ অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নের উপকারভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে এই অভিযোগ করেন। অপরদিকে জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন শতাধিক উপকারভোগী।
তাদের অভিযোগ, উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের এক হাজার ১৮ জনের ১০ টাকা কেজি চালে কার্ড নবায়ন ও ডাটাবেজের কাজ শুরু হয় বৃহস্পতিবার। একইদিন নিবন্ধনের জন্য উপকারভোগীরা ইউনিয়ন পরিষদে এলে পরিষদের উদ্যোক্তা মৃনাল চন্দ্র রায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেন। তখন ইউপি সদস্যরা প্রত্যেকের কাছে ৫০০ টাকা করে দাবি করেন। ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে ওই পরিমাণ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ইউপি সদস্যরা।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উপকারভোগী জাহিদা বেগম বলেন, ‘আমাদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের নির্দেশে নিবন্ধনের জন্য ৫০০ টাকা করে চেয়েছেন। আমাদের ওয়ার্ডের কাল্টু মেম্বার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ৪৯৯ টাকা দিলেও নিবন্ধন করা হবে না।’ একই অভিযোগ করেন আট নম্বর ওয়ার্ডের মনোয়ারা বেগম।
তবে ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল মুকুল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি মানুষকে টাকা দেই। আমি মানুষের টাকা নেবো কেন?’
এ বিষয়ে জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুব হাসান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। টাকা নেওয়ার কোনও নিয়ম নেই। ডাটাবেজ তৈরি হবে বিনামূল্যে, সরকারি খরচে। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুই হাজার ২৮৫টি কার্ডের নবায়ন ও ডাটাবেজের কাজ শুরু হয়। ওই কাজের জন্য উপকারভোগীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিনামূল্যের কাজে টাকা আদায়ে বিক্ষুদ্ধ লোকজনের তোপের মুখে দুপুরে কাজ বন্ধ করে চলে যান উদ্যোক্তা ও ইউপি সদস্যরা।
ওই ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের উপকারভোগী মিনু বেগম ও মিজানুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদে নিবন্ধনের জন্য যাই। সেখানে গিয়ে দেখি ১০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ, টাকা পাবো কোথায়? পরে জানতে পারি ওই কাজ বিনামূলে করার কথা।’
টুপামারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মছিরত আলী শাহ ফকির বলেন, ‘আমি উপজেলা পরিষদে একটি মিটিংয়ে ছিলাম, পরে ঘটনা শুনেছি। বিনামূলে সেবা প্রদান করা হচ্ছিল, কোনও টাকা আদায় করা হয়নি। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিষদে কয়েকজন উদ্যোক্তা কর্মরত আছেন। তারা কোনও বেতন-ভাতা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পান না। এক্ষেত্রে তারা সামান্য কিছু নিলেও নিতে পারেন। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।’
সদর উপজেলার ইউএনও জেসমিন আক্তার বলেন, ‘এ বিষয়ে লিখিত কোনও অভিযোগ পাইনি। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’