গোলাপগঞ্জের বাঘায় সুপারি পাড়তে গিয়ে গাছ ভেঙে পানিতে পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে৷ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক রাসেল আহমদ।
নিহত ব্যক্তি আওয়া (৪০) গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাঘা পালবাড়ির অজিত পালের পালিত পুত্র ছিলেন। এ ঘটনায় বাকপ্রতিবন্ধী যুবকের পালিত পিতা অজিত পাল গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ, বাক প্রতিবন্ধী ওই যুবককে আনুমানিক ২০ বছর আগে সিলেট রেল স্টেশন থেকে বাড়িতে এনে লালন-পালন করেছিলেন অজিত পাল। তারপর থেকে মৃত্যুর পূর্ব দিন পর্যন্ত তাদের বাড়িতেই থাকতেন তিনি। গেল বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে গত শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার দক্ষিণ বাঘার পাল বাড়ির পুকুর পাড়ে পালিত পিতা অজিত পালের ভাতিজা সঞ্জয় পাল তার মরদেহ দেখতে পান। বাড়িতে জানাজানি হবার পর তাৎক্ষণিক গোলাপগঞ্জ মডেল থানাকে বিষয়টি অবগত করেন অজিত পাল। তারপর পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহের সুরতহাল করেন।
সাধারণ ডায়েরিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তিনি সুপারি পাড়তে গিয়ে অসতর্কতাবশত গাছ ভেঙ্গে পুকুরের পানিতে পড়লে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে পুলিশ।
এদিকে, হিন্দু বাড়িতে পালিত হলেও সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই যুবক মুসলমান বলে জানায় পুলিশ। তাই ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক তাকে দাফন করতে কোন আপত্তি জানাননি অজিত পাল। এরপর গত (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে যুবকের মরদেহ সিলেটের মানিকপীর কবরস্থানে দাফন করা হয়৷
বাকপ্রতিবন্ধী (আওয়া) যুবকের মৃত্যুতে পালবাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাকে হারিয়ে তার পালিত পিতা অজিত পাল বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন৷
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহ ময়নাতদন্তকালে শোকাভিভূত হয়ে অজিত পাল বলেন, ‘আমি তাকে পিতার মত আদর-স্নেহ করতাম৷ মাঝেমাঝে শাসনও করতাম। আমার ক্ষেত-কৃষিতে সে সর্বাত্মক সহযোগিতা করত। রাতে বাজার করতে যেত। সে মুসলমান হলেও আমাদের ধর্মীয় উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে খুবই উৎফুল্ল থাকত৷ পুরো বাড়ির সকল মানুষজন এবং আত্মীয়-স্বজনরাও তাকে খুবই স্নেহ করতেন। এমনকি এলাকায় চলাফেরায় সকলের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল৷ ভগবান তার মঙ্গল করুন।’
গোলাপগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক রাসেল আহমদ জানান, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হলে তদন্তে যায় পুলিশ। এ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, সুপারি পাড়তে গিয়েই গাছ ভেঙে পানিতে পড়ে তার (আওয়া) মৃত্যু হয়েছে। পরে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন দাখিল করে ময়নাতদন্তের পর মুসলিম ধর্মীয় রীতিতে তাকে দাফন করা হয়েছে।’ এ ঘটনায় গোলাপগঞ্জ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।