হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ বেত কুটির শিল্প

বাংলাদেশের এক সময়ের সম্ভাবনাময় বাঁশ বেত কুটির শিল্প আজ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে। প্লাস্টিক পণ্যের অবাধ ব্যবহার ও করোনা ভাইরাস ও ইতিহাসের ভয়াবহ বন্যায় দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব এ শিল্পের বিলুপ্তিকে তরান্বিত করছে।

এক সময় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে উৎসব মুখোর পরিবেশে বাঁশ দ্বারা তৈরি হতো শিখাই, ফলদানি, বাস্কেট, বক্স, বিউটি বক্স, কসমেটিক্স বক্স, টি ট্রে, বিয়ের ডালা, লাইট সেট, মাথার ক্লিপ, কলমদানিসহ চোখ ধাঁধাঁনো নানান জিনিস। নির্দিষ্ট ডিজাইনের এসব পণ্য সারাজেলাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রয় করা হত। গত দুই দশক ধরে দেখা যায় না তাদের সেই কার্যক্রম। বর্তমানে অল্প সংখ্যক লোকজন এটা ব্যবহার করছেন।

উপজেলার রসুলগঞ্জ বাজার, রানীগঞ্জ বাজার, মিরপুর বাজার, চিলাউড়া বাজার, কলকলিয়া বাজার সহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে আগের মত আর বিক্রয় হয় নাই এ পণ্য। বিশেষ করে মাছ, তরকারীসহ বিভিন্ন কাজে এ পণ্য বিক্রয় হলেও এখন আর ক্রেতাদের আগ্রহ নেই। যার কারণে বাজারের ব্যবসায়ীদেোও আগের মত মাল দোকানে রাখেন না। এসব পণ্য ক্রয়ে ক্রেতাদেরকেও আর বাজারে আসতে দেখা যায় না। বাঁশের জিনিসপত্রের প্রতি মানুষের চাহিদা নেই বললেই চলে। মূলধন থাকেনা এই কাজে। তাই বাঁশের তৈরী মাল ক্রয় করছেন না।

কুটির শিল্পের সাথে জড়িত লোকজন জানান, ৯০র দশকে হস্তজাত শিল্প ব্যাপক চাহিদা ছিল। দেশেও বিপণন নীতি উন্নত না হওয়ায় এবং প্লাস্টিকের সহজলভ্যতায় এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। সরকার প্রণোদনার আকারে স্বল্প সুদে ঋণ দিলেও বিভিন্ন শর্ত থাকায় এ শিল্পের শিল্পীরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন।

তারা বলেন, ‘প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য সামগ্রীর অবাধ ব্যবহার ও সহজলভ্যতায় দেশীয় বাজারে বাঁশ বেত শিল্পের চাহিদা নেই বললেই চলে। ফলে এ শিল্পের সাথে আমরা জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে শ্রমিক, মজুর, স্বর্ণের কারিগর সহ বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ছি।’

এভাবে শত বছরের ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে। কেউ কেউ বাপ-দাদার অতীত ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করলেও আমাদের অবস্থা একেবারেই করুণ।

ঐতিহ্যবাহী শিল্পের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা, প্লাস্টিকের অবাধ ব্যবহার কমানো, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, প্রণোদনা বা সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার দাবি জানান এ শিল্প সংশ্লিষ্টরা।।