হাকালুকি হাওরপাড়ে পানি ওঠায় বিদ্যুতের দুটি সাব স্টেশন ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সড়কে পানি উঠায় জুড়ী-লাঠিটিলা ও মোলাভীবাজার-বড়লেখা সড়কের শেষ অংশে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শনিবার মৌলভীবাজারে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগ জানায়, শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পাশে দক্ষিণভাগে ২০৫ মিলিমিটার এলাকায় ১৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এছাড়া সদর উপজেলার শেরপুর ব্রিজের পাশে ৯০ মিলিলিটার, মনু রেল ব্রিজ এলাকায় ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আর এই পানি বিভিন্ন ছোট নদ-নদী খালবিল ও ছড়া হয়ে বিভিন্ন হাওরে গিয়ে পড়ছে। ফলে হাকালুকি, কাউয়াদিঘী, হাইলহাওরসহ বিভিন্ন হাওরের পানি দ্রুত বাড়ছে। হাওর এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে যেতে শুরু করেছে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ইতোমধ্যে কুলাউড়ার ফানাই নদীর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ এবং শহরের জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবরিনা রহমান, কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরীসহ সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলায় গত ৩৬ ঘণ্টায় রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। মনু, ধলাই, ফানাই, কন্টিনালা, জুড়ী- এসব নদীর পানি বেড়েছে। হাওর এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। তবে এই জেলায় এই মুহূর্তে বন্যার সম্ভাবনা কম। বিশেষ করে এই বৃষ্টি মৌসুমে। আর আশার কথা, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এখন বৃষ্টি নেই। মনু ধলাইসহ এই এলাকার নদীগুলোর উৎপত্তি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। যে কারণে মৌলভীবাজার জেলায় বন্যার তেমন সম্ভাবনা নেই।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে, কুলাউড়ায় হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভূকশিমইল, ভাটেরা, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর ও কুলাউড়া সদর- এই সাতটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া কর্মধা ইউনিয়নের মহিষমারা গ্রামের ফানাই নদীর বাঁধ ভেঙে মহিষমারা, বাবনিয়া, হাশিমপুর, ভাতাইয়া, পুরশাই গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। অর্ধ শতাধিক গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি। গ্রামগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
জুড়ী উপজেলায় ২৮টি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের অধিকাংশ রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। এ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ২৪টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।
এছাড়াও জায়ফরনগর ইউনিয়নের গৌরীপুর ও সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গোয়ালবাড়ি পশ্চিম শিলুয়া গ্রামে জুড়ী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাঁধ মেরামত কাজ চলছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর, মনুমুখ,আখাইলকুড়া, কনকপুর, কামালপুর, চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় সাত হাজার পাঁচশ জন।
রাজনগর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় চার হাজার।
শ্রীমঙ্গলে গাছের ডাল পড়ে এক নারী চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত অনিতা তাঁতি রাজঘাট চা বাগানের মৃত যতন তাঁতির স্ত্রী।
শনিবার বাগানের ৩ নং সেকশনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় তিনি বাগানে চা পাতা তুলছিলেন।
কমলগঞ্জ উপজেলায় অতি বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর পাড় ভেঙে নয়টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।