আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। হাওরের বোরো ফসল বন্যা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। আর এমন আশঙ্কা থেকেই সুনামগঞ্জ জেলার সব হাওরের পাকা ধান কেটে ফেলতে বিভিন্ন উপজেলায় মাইকিং করছে প্রশাসন। সিলেটেও এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, টানা ২ দিন ধরে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সুনামগঞ্জের প্রতিটি উপজেলা প্রশাসন ধান কাটার নির্দেশনা দিয়ে হাওরে মাইকিং করছে। একইসঙ্গে কৃষকদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বানও জানানো হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত লক্ষাধিক হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে। শাল্লা, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও দিরাই উপজেলার হাওরের ৬০ ভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। অন্যান্য উপজেলার হাওরের ৫০ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে। হাওর ও নন-হাওর মিলিয়ে এ পর্যন্ত গড়ে ৪৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে।
সবচেয়ে কম ধান কাটা হয়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলায়। এই উপজেলায় হাওরের ধান কাটার গড় ৩০ ভাগের নিচে। এখন প্রতিদিন গড়ে হাওরে ৬ ভাগ ধান কাটা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
হাওরে ধান কাটার প্রকৃত তথ্য নিয়ে দ্বিমত করেছেন কৃষক ও হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা। তারা জানিয়েছেন, ধান পাকলেও পর্যাপ্ত শ্রমিক ও হার্ভেস্টরের কারণে ধান কাটতে বিলম্ব হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব বলেন, বর্তমানে হালকা, মাঝারি বৃষ্টিপাত, ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। তবে ২৩ এপ্রিল থেকে টানা ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ শামসুদ্দোহা বলেন, মেঘালয়ে টানা ভারী বর্ষণ ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এতে হাওরের পাকা ফসল ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি থাকলে কৃষক ধান কাটতে পারে না। এ কারণেই আমরা পাকা ধান দ্রুত কাটার আহ্বান জানাচ্ছি।
সুনামগঞজের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মকসুদ চৌধুরী বলেন, হাওরের পাকা বোরো ধান যাতে ঝুঁকির মুখে না পড়ে সেজন্য আমরা প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কৃষকদের ধান কাটায় উৎসাহ দিতে মাইকিং করাচ্ছি।
আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ধান কাটার জন্য শ্রমিক সংকট নেই। প্রায় ১ হাজার হার্ভেস্টর মাঠে ধান কাটার কাজ করছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, এখন গড়ে প্রতিদিন ৬ শতাংশ ধান কাটা হচ্ছে। হাওরের সব ধান কাটার উপযুক্ত হয়েছে। ধান কাটা যন্ত্রের সঙ্গে শ্রমিকেরও কোনো সঙ্কট নেই। তবে দ্রুত ধান কাটতে আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি। এই মুহূর্তে হাওরের ফসল ক্ষতির মুখে পড়লে পুষিয়ে ওঠা কঠিন হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, আগে থেকেই সিলেটের হওরেরর উপযুক্ত ধান কাটর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আশা করি এবার চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়বেন না।