হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইলেন বেসিক ব্যাংকের বাচ্চু

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের করা ৫৮ মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়েছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু।

বুধবার (৯ আগস্ট) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেছেন বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির এই মূল হোতা। হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে এর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেসিক ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনায় ২০ মামলায় ৪ আসামিকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে বুধবার তাদের আত্মসমর্পণের আদেশ স্থগিত করে দেন চেম্বার আদালত।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ৫৮ মামলায় বাচ্চু আগাম জামিন চেয়েছেন। দুদক থেকে আমাকে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। গত ১৫ জুন পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছে দুদক। এতে বলা হয়, শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ একাধিক আসামির বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতিসহ বেসিক ব্যাংকের প্রায় ২ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মামলার রেকর্ডে প্রমাণ পাওয়া গেছে। গোপন সূত্রে খবর পাওয়া যায়, মামলার তদন্তে আসা আসামি শেখ আবদুল হাই বাচ্চু দেশত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

ওই চিঠিতে, তিনি যেন বিদেশ যেতে না পারেন সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষ পুলিশ সুপারকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, ১২ জুন বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ৫৯টি মামলার ৫৮টিতে বাচ্চুকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় সংস্থাটি। অর্থ জালিয়াতিসহ বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির এসব মামলায় বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ২৬৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় দায়ের করা এসব মামলায় মোট ১২০ জনকে আসামি করা হয়। আসামির তালিকায় ৮২ ঋণগ্রহীতা, ২৭ ব্যাংকার ও ১১ জন ভূমি জরিপকারীর নাম থাকলেও ছিল না আবদুল হাই বাচ্চুর নাম।

ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি করা হলেও আবদুল হাই বাচ্চু ছিলেন অধরা। তাকে কোনো মামলায়ই আসামি করা হয়নি। এ বিষয়ে বরাবরই দুদকের বক্তব্য ছিল, ‘ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দালিলিকভাবে আব্দুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।’ একই সঙ্গে রহস্যজনক কারণে মামলার তদন্ত আটকে ছিল। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালত একাধিকবার অসন্তোষ জানালে পাল্টে যায় সবকিছু। পরে মামলার তদন্তকালে দুদক জানতে পারে আলোচিত এই ঋণ কেলেঙ্কারির পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু।

গত ১২ জুন একযোগে দাখিল করা হয়েছে ৫৯ মামলার চার্জশিট। অভিযুক্ত করা হয়েছে বাচ্চুকেও।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন আবদুল হাই বাচ্চু। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়ন করা হয়। ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগের মুখে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণের পর চাপ সামলাতে না পেরে পদত্যাগ করেন বাচ্চু।

সূত্র : যুগান্তর