হবিগঞ্জে ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত এক কিশোরের ময়নাতদন্ত হচ্ছে না। মরদেহ গত তিনদিন ধরে ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) কামরান আখঞ্জী (১৪) নামে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়। আজ শনিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর পর্যন্ত তার মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়নি।
ছেলের লাশ নিয়ে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে অবস্থান করছেন বাবা আব্দুল হাই আখঞ্জী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার।
জানা গেছে, আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালসহ জেলার ৪০ চিকিৎসক একসঙ্গে ঢাকা যান। যে কারণে কামরানের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়নি। চিকিৎসকরা ফিরে এলেও ‘সুরতহাল না পাওয়ায়’ ময়নাতদন্ত করা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মোমিন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বেশ কয়েকজন চিকিৎসক সম্মেলনে ছিলেন তাই ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হয়নি। এখন পুলিশ সুরতহাল দিচ্ছে না, তাই করা যাচ্ছে না। যেহেতু পুলিশ সুরতহাল দেয়নি, লাশ মর্গে রাখার কথা না। তারপরও আমরা মানবিক বিবেচনায় সেটি করছি।
কিন্তু বাহুবল মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল বাশার বলেন, মরদেহের সঙ্গেই সুরতহাল প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। মর্গে ঘটনার দিন থেকে আজ পর্যন্ত একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তারা কেন ময়নাতদন্ত করছেন না, তা জানি না।
পুলিশ-চিকিৎসক এ ঠেলাঠেলির কারণে ছেলের লাশ নিয়ে অপেক্ষা বাড়ছে আব্দুল হাই আখঞ্জীর। উপজেলার মুখকান্দি গ্রামের এ বাসিন্দা জানান, কামরান চলিতাতলা মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্যাডমিন্টন খেলছিল সে। হঠাৎ অসাবধানতাবশত তার হাতে থাকা র্যাকেট ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য টানানো বিদ্যুতের তার স্পর্শ করে। এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট কামরানের মৃত্যু হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে উদ্ধারের পর কামরানের মরদেহ হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় বাহুবল মডেল থানার পুলিশ।
কিন্তু এদিন হাসপাতালের ৪০ চিকিৎসক স্বাচিপ পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকায় চলে যান। যে কারণে কামরানের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়নি। চিকিৎসকরা ফিরলেও পুলিশ সুরতহাল না দেওয়ায় মরদেহটি এখনও হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে।
আব্দুল হাই আখঞ্জী জানান, ছেলে খেলতে গিয়ে নিহত হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। তারা ময়নাতদন্ত ছাড়াই কামরানের মরদেহ দাফন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আইনি জটিলতা থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি। ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে মরদেহ পড়ে আছে। কেউ বিষয়টি নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা হতে চলেছে, ছেলের মরদেহ হাতে পাননি। তাই বাধ্য হয়ে মরদেহটি চা-পাতা ও বরফ দিয়ে পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, কামরানের চাচাতো ভাই আর মামা বাজার থেকে ২ কেজি চা-পাতা ও ৬ পাটা বরফ নিয়ে আসেন। চা-পাতা ও বরফ দিয়ে মরদেহ পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। চিকিৎসক না এলে এভাবেই রাখতে হবে বলে হাসপাতাল থেকে তাদের জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল ইসলাম সরকার জানান, হাসপাতালে হিমাগার না থাকায় বরফ দিয়ে পলিথিনে মুড়িয়ে কামরানের মরদেহটি রাখা হয়েছে।
বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুল হাসান খান বলেছেন, কামরানের মৃত্যুর পর এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়। কীভাবে সে মারা গেছে, সেটি নিশ্চিত না হয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ দাফন করা যাচ্ছে না। দ্রুত বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে।