সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে হবিগঞ্জের ৩টি থানায় সাড়ে ৪শ বিএনপি নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। মামলায় জেলার নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলা থেকে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
দুটি মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সাবেক মেয়র জি কে গউছ ও সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা শেখ সুজাত মিয়াকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় বিএনপির প্রস্তুতি সভাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় জি কে গউছসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
লাখাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলে রাব্বী বাদী হয়ে পুলিশ এসল্ট ও বিস্ফোরক আইনে মামলাটি দায়ের করেন। এতে জি কে গউছসহ ৪৫ জনের নাম উল্লেখ ও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করলে ৫০ থেকে ৬০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এতে পরিদর্শক (তদন্ত) চম্পক ধামসহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
তবে সাবেক মেয়র জি কে গউছ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সভা করতে গিয়েছিলাম। পুলিশ বেআইনিভাবে সেখানে হামলা করে আমাদের নেতাকর্মীদের আহত করেছে।
এদিকে নবীগঞ্জে ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১২০ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ মামলার প্রধান আসামি সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ সুজাত মিয়া। এ উপজেলা থেকে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ডালিম আহমেদ জানান, গত মঙ্গলবার রাতে নবীগঞ্জ শহরের হাজারী কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী কার্যক্রমের জন্য সমবেত হয়েছিলেন। পুলিশ সেখানে গেলে নেতাকর্মীরা তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে নবীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গৌতমসহ ৩/৪ জন আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তবে এ বিষয়ে শেখ সুজাত মিয়া বলেন, ১৯ নভেম্বর সিলেটের বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রতিবন্ধকতার জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে যে ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তেমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজয় চন্দ্র দেব জানান, সিলেটে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার রাত ১২টায় দলটির ৩০/৩৫ জন নেতাকর্মী বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র নিয়ে মাঠে বসেছিলেন। পুলিশ সেখানে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করেন ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এসময় ওসিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সেখান থেকে বিস্ফোরক জব্দ করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে বানিয়াচং উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহির খানকে আটক করে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ ঘটনায় ৩২ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ বিএনপির ১৩২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তবে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, পুলিশ অন্যায়ভাবে বিএনপির এক নির্বাচিত নেতাকে গ্রেফতার করেছে। সিলেটের গণসমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারপত্র বিলি করছিলেন। পরে তারা এক বিএনপি নেতার দোকানে চা পান করতে যান। পুলিশ সেখানে হানা দিয়ে এক নেতাকে ধরে নিয়ে গেছে। এভাবে বাধা দিয়ে আমাদের থামানো যাবে না। সিলেটের গণসমাবেশ জনস্রোতে পরিণত হবে।