হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। ধীর গতিতে নামছে পানি। বন্যায় আক্রান্ত হয়ে জেলার আজমিরীগঞ্জ, লাখাই, বানিয়াচং ও নবীগঞ্জেসহ জেলার ৫৪টি ইউনিয়নের সহস্রাধিক গ্রামের লাখো মানুষ বিপাকে পড়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষেরা।
এসব পরিবার এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে থাকলেও তাদের পরবর্তী দিনযাপন নিয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় ভোগছেন। তাছাড়া অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছেন অনেকেই। এসব পরিবারের তেমন সঞ্চয় নেই। অনেকের জমানো সঞ্চয় ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আবার অনেকেই শূন্য হাতে এসেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। অর্থ সংকটে এসব পরিবার এখন ত্রাণের দিকে চেয়ে আছেন।
আবার অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণের সংকট রয়েছে। শূন্য হাতের এসব বন্যা কবলিত মানুষের দুর্গতি এখানেই শেষ নয়, পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ফিরতে হবে নিজের বসতভিটায়। কিন্তু এ নিয়েও আছেন দুঃশ্চিন্তায়। কারণ, বন্যার পানিতে অনেকেরই ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। আবার কারও কারও গরু ছাগল জমি ফসল নষ্ট হয়ে তারা হয়ে পড়েছেন নিঃস্ব। ঘুরে দাঁড়ানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু কিছু বসতভিটা থেকে পানি নেমে গেরেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়ি। অনেক টিনশেডের ঘরের নিচের মাটি সরে গিয়ে ঘরের অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেছে। বেশির ভাগ এলাকার অধিকাংশ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত আব্দুল গফুর জানান, ‘এখন অনেকে ত্রাণ দেওয়ায় খেতে পারছি। তবে, পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ঘর মেরামত করতে হবে। মেরামতের জন্য হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ নেই।’
আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত শিক্ষার্থী সীমা আক্তার জানান, ‘পানিতে আমাদের ঘর তলিয়ে গেছে। আমার বাবার তেমন আয় নেই। এখন আমার পড়ালেখা কিভাবে চলবে তা বুঝে উঠতে পারছি না। এসব পরিবারের ঘুরে দাঁড়ানোর পর লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নেওয়াটা তাদের জন্য আরো বেশি দুশ্চিন্তার কারণ এখন।’
এদিকে বন্যা আক্রান্ত এলাকায় ডুবে গেছে শত শত পুকুর। এছাড়াও অনেক মৎস্য খামার ডুবে ভেসে গেছে চাষ করা মাছ। আক্রান্ত এসব পুকুরের খামারিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছর জেলায় ১৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে থাকা ৭ হাজার ৯শ ১টি পুকুর, ফিশারী ও খামারে মাছ চাষ করেন ৫ হাজার ৮শ ৫৩ জন মৎস চাষী। চলতি গত কয়েক দিনের বন্যায় জেলার বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, বাহুবল, নবীগঞ্জ, মাধবপুর, লাখাই ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ওই ৭ উপজেলার ১৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে থাকা ৭ হাজার ৯শ ১টি পুকুর, ফিশারী ও খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ফলে ৫ হাজার ৮শ ৫৩ জন খামার মালিকের প্রায় ৪২ কোটি ২৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বন্যায় কবলিত হয়ে অনেক পুকুর, ফিশারী ও খামারের মাছ ভেসে যাওয়ায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক মৎস্য চাষী। ঋণ নিয়ে অনেকেই ফিশারী ও পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। বন্যার পানিতে এসব মাছের পোনা ভেসে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধ করা নিয়েও এখন দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
নবীগঞ্জের কবির মিয়ার মাছের খামার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি জানান, ‘বন্যার পানি সব মাছ নিয়ে গেছে। বন্যায় আমার মাছ চাষে অনেকটা ক্ষতি হয়ে গেছে।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু মাসুদ জানান, ‘বন্যার পানিতে অনেক পুকুর তলিয়ে গেছে। মৎস্য খামারিদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আমরা পুরো তথ্যসংগ্রহ করতে পারব।’
এ বিষয়ে হবিগঞ্জে এনডিসি জহরুল হোসেন জানান, ‘বন্যার পানি এখনও নামেনি। আমরা সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। তবে বন্যার পানি নেমে গেলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক অনুদান প্রদান করা হবে।’