হবিগঞ্জের লাখাইয়ে বিশাল একটি দীঘিতে মাছ চাষের উপযোগী করে তুলতে খননকাজ চালানোর কথা বলে প্রায় দেড় কোটি টাকার ভূগর্ভস্থ বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার করাব গ্রামের ফুলতৈল এলাকায় অবস্থিত ওই দীঘিতে ডিজেল ইঞ্জিনচালিত শ্যালো পাম্প মেশিন বসিয়ে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করার একপর্যায়ে গত ৫ জানুয়ারি স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন হবিগঞ্জ আদালত। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সরেজমিনে তদন্ত করে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য হবিগঞ্জের পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে মামলার খবর পেয়ে গত ১০ জানুয়ারি বেলা ৩টার দিকে মামলার প্রধান আসামি রিয়াদ চৌধুরী গং বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত শ্যালো মেশিন খুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে লাখাই থানার পুলিশ তা জব্দ করে। সর্বশেষ গত শনিবার পিবিআই’র একটি টিম সরেজমিনে মামলা তদন্ত করে গেছে বলে জানা গেলেও তদন্তের বিষয়ে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র মতে, এ পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি টাকার বালু বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন করাব গ্রামের রিয়াদ চৌধুরী নামে এক যুবক। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এবং তার ভাই জরিদ, স্বপন, মামুন মিলে প্রভাবশালী মহলকে হাত করে প্রায় ৪ বছর ধরে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালু বিক্রি করে কোটি টাকা উপার্জন করেছেন।
এর আগে সরেজমিনে দেখা যায়, ওই দীঘিটিতে দুটি পাইপলাইন স্থাপন করে কয়েকটি ডিজেলচালিত শ্যালো পাম্প ব্যবহার করে ভূগর্ভ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ডিজেল ইঞ্জিনের শব্দে কান পাতা দায়। অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন জলাশয় ভরাট করে বাড়িঘর নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে একটি পাইপলাইন। আরেকটি পাইপলাইন দিয়ে বালু বেকিটেকা ব্রিজ পার হয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে হবিগঞ্জ-লাখাই সড়কের পাশে একটি নিচু জমিতে জমা করা হচ্ছে। সেই বালু রিয়াদের ব্যবসায়িক অংশীদার সদর উপজেলার আসেরা গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল মিয়া বেআইনিভাবে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন বলে জানা গেছে। ওই দীঘিটির ভূগর্ভ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করায় যেকোনো সময় চারপাশের বাড়িঘর ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আতঙ্কে সেখানকার বাসিন্দারা মিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শরিফ উদ্দিনের কাছে গত ১৮ ডিসেম্বর লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দীঘির পশ্চিম দিকে ঘরবাড়ি ও রাস্তা রয়েছে। পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ঘরবাড়ি আছে। রিয়াদ গং ডিজেল ইঞ্জিনচালিত পাম্প মেশিন দিয়ে অতি গভীরভাবে বালু উত্তোলনের ফলে দীঘির আশপাশের ঘরবাড়ি ও রাস্তা বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। দীঘিটি আগে থেকেই অতি গভীর হওয়ায় আশপাশের শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে যেকোনো সময় দীঘির মধ্যে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, রিয়াদ গং ২০১৮ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৭ লাখ ১৫ হাজার ঘনফুট বালু বিক্রি করেছেন অবৈধভাবে। ২০ টাকা ফুট বিক্রয় করা হলে যার মূল্য দাঁড়ায় ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে প্রধান আসামি রিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ পুকুরটি তাদের মালিকানাধীন। এটিকে মাছ চাষের উপযোগী করতে খননকাজ চালানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকতা নাহিদা সুলতানা জানান, আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্ত চলমান আছে।