পরিবেশ ও নদী রক্ষায় অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের টেরি বেকার পদকে ভূষিত হওয়ায় পরিবেশ সংগঠক খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেলকে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ প্রদত্ত সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তোফাজ্জল সোহেলকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট প্রদান করে সম্মাননা জানান অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, তোফাজ্জল সোহেল দীর্ঘদিন ধরে কেবল হবিগঞ্জ শহর বা জেলা নয়; সিলেট বিভাগসহ সারাদেশে পরিবেশ-প্রতিবেশ ও নদ-নদী রক্ষায় তৎপর ছিলেন; নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বিশেষত: হবিগঞ্জের শিল্প-দূষণ, সুতাং নদীর দূষণ, খোয়াই ও পুরাতন খোয়াই নদীর দখল-দূষণ, হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পুকুর ও জলাশয় দখল-দূষণ বিরুদ্ধে আন্দোলন ও জনমত গঠন করে হবিগঞ্জের পরিবেশ নির্মিল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। হাওর ও এর জীব-বৈচিত্র রক্ষায় তিনি ছিলেন সোচ্চার। হবিগঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চলসহ জেলার বন অপরাধসমূহের বিরুদ্ধে আপোসহীন ভূমিকা জেলাকে একটি সবুজ জনপদে পরিণত করেছে। চা-বাগানের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সামনের কাতারের সংগঠক হিসেবে যেকোনো মানবাধিকার ইস্যূতে তার অবস্থান ছিল স্পষ্ঠ। জেলার পর্যটন শিল্প বিকাশেও তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। এসব কাজ করতে গিয়ে তিনি বিভিন্নসময় স্বার্থান্বেষীমহলের ও দখল-দূষণকারীদের হুমকীর সম্মুখীন হয়েছেন। তারপরও দমিয়ে যাননি। টেরি বেকার পুরস্কার পাওয়ায় তোফাজ্জল সোহেলই কেবল সম্মানীত হননি; বাংলাদেশের মুখ উজ্জল হয়েছে। হবিগঞ্জবাসীও তাঁর এই অর্জনে গর্বিত।
শুক্রবার ( ২৯ নভেম্বর) সকাল ১০ ঘটকায় হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে পরিবেশ সংগঠক ও বিশিষ্ঠ শিক্ষাবিদ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক।
বিশেষ অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. হারুন মিয়া, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, সাবেক উপাধ্যক্ষ আব্দুজ জাহের, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি, শচীন্দ্র ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফরাশ উদ্দিন শরীফী ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, পরিবেশ সংগঠক মোহাম্মদ আলী মমিন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জমির আলী, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল হক, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শোয়েব চৌধুরী, হবিগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক পীযূষ চক্রবর্তী, প্রথম আলো’র নিজস্ব প্রতিবেদক হাফিজুর রহমান নিয়ন, আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম, রোটারী ক্লাব অব হবিগঞ্জের সভাপতি মহসিন চৌধুরী, রোটারি ক্লাব অব হবিগঞ্জ খোয়াইয়ের সভাপতি আজিজুর রহমান মান্না, পরিবেশ সংগঠক এডভোকেট বিজন বিহারি দাস, এডভোকেট হাসবি সাঈদ চৌধুরী, আব্দুল কাইয়ুম, মো. বাহার উদ্দিন, সাংবাদিক আব্দুল হালিম, কলেজ শিক্ষক শামীমা বেগম শাম্মী, তারুণ্য সোসাইটির সভাপতি আবিদুর রহমান রাকিব, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী মো: সামী, গাছ মামা খ্যাত মো: রায়হান, পরিবেশকর্মী আফরোজা সিদ্দিকা, সাইফুল ইসলাম, মহিউদ্দিন আহমেদ রিপন, জেকে এন্ড এইচকে হাই স্কুল এন্ড কলেজের শত বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৌরভ ওয়াহেদ, রিফাত, ইন্টারেক্টর তাসিন বিলওয়াল আরিয়ান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন নাট্যকার সিদ্দিকী হারুন।
মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, তোফাজ্জল সোহেল কেবল একজন পরিবেশকর্মী বা সংগঠক নন; তিনি একজন সাংস্কৃতিক সংগঠক ও মানবাধিকারকর্মী। তিনি রাত-দিন, শীত-বর্ষা উপেক্ষা করে পরিবেশ ও মানবাধিকার ইস্যুতে কাজ করেছেন। কোভিড মহামারীসহ দেশের বিভিন্ন দূর্যোগেও তিনি আমাদের পাশে ছিলেন। খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার হিসেবে তিনি বিগত একযুগ ধরে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। টেরি বেকার পদকও তিনি খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার হিসেবে পেয়েছেন। এ পদক প্রাপ্তিতে তোফাজ্জল সোহেল কেবল সম্মানীত হননি; আমরা যারা তাঁর সাথে কাজ করেছি তাঁরাও সম্মানিত হয়েছি, কাজের স্বীকৃতি পেয়েছি। বাংলাদেশে প্রথম কোনো ব্যক্তি হিসেবে টেরি বেকারের পদকের মত সম্মানসূচক স্বীকৃতি তোফাজ্জল সোহেলকে আরও দায়িত্ববান করে তুলবে।
সভাপতি বক্তব্যে অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, নদী দখলদূষণ প্রভৃতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে নিয়ে বিগত দিনগুলোতে ব্যাপক জনমত গঠন করেছেন। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করাতে তোফাজ্জল সোহেল নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন। যেকোনো ধরনের নাগরিক ইস্যুতে তোফাজ্জল সোহেল সামনের কাতারের একজন যুদ্ধা ই কেবল নন; তিনি একজন সংগঠকও। তার কাজের স্বীকৃত স্বরূপ টেরি বেকার পদক অন্যান্যদের এসব নাগরিক ইস্যুতে কাজ করতে উৎসাহ যোগাবে।