সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন দাবি ও প্রস্তাব পেশ

সড়কে প্রাণহানী ঠেকাতে আইনের বাস্তবায়ন চায় ‘নিসচা’

নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২২ উপলক্ষে সিলেটের প্রতিটি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী ঠেকাতে অক্টোবর মাসজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে সামাজিক সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’।

সোমবার (৩১ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন ‘নিসচা’ সিলেট মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘নিসচা’ সিলেট মহানগর কমিটির সভাপতি এম ইকবাল হোসেন।

তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন- ‘মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে নিসচা সিলেটের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, চালকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ, অভিভাবক সমাবেশ, বাস টার্মিনালে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমাবেশ ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, সুধী সমাবেশের আয়োজন ও মতবিনিময়, সাংবাদিক সম্মেলন, আলোচনাসভা, গোলটেবিল আলোচনা, সেমিনার, ট্রাফিক ক্যম্পেইন, র‌্যালি, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত, সচেতনামূলক লিফলেট বিতরণ, পোস্টার প্রকাশ, ব্যানার-ফেস্টুন স্থাপন, সড়কে বিভিন্ন ঝুঁঁকিপূর্ণ পয়েন্টে সতর্কতামূলক প্রচার ও নির্দেশিকা স্থাপন, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, গণমাধ্যমে চেয়ারম্যানের বিষয়ভিত্তিক নিবন্ধ প্রকাশ ও টক-শোতে অংশগ্রহণ ইত্যাদি। এছাড়াও নিসচা সিলেট মহানগর শাখার উদ্যোগে প্রায় দুই মাস ধরে বেশ কিছু স্কুলের শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এছাড়াও নিসচা সিলেট মহানগর শাখার পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক বিভাগের কাছে মহানগরীতে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগনাল ব্যবস্থা চালু, নির্দিষ্ট গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ, রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ এবং বাদাঘাট বাইপাস সড়ক ট্রাক চলাবলের জন্য অবিলম্বে চালুর জোর দাবি জানানো হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে এম ইকবাল হোসেন আরও বলেন- নিরাপদ সড়ক গঠনে ২০১৮ সালে প্রণিত আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সর্বপ্রথমে প্রয়োজন সরকার ও রাজনৈতিক মহলের সদিচ্ছা। তারপর সড়কে চলাচলে চালক, মালিক, যাত্রী, পথচারী সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি জাতিসংঘ ঘোষিত সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম ৫টি বিষয়- সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী ও সড়ক দুর্ঘটনায় পরবর্তী করণীয় বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ৫টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়- যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, আরোহীদের হেলমেট ও সিটবেল্ট ব্যবহার, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি না চালানো ও যানবাহনে শিশু আসন নিশ্চিত করতে হবে।

এম ইকবাল হোসেন জানান- ২০১৮ সালের আইনে অনেক ফাঁক রয়ে গেছে। সেগুলো চিহ্নিত করে নীতিমালার দ্রæত সংযোজন প্রয়োজন। যেমন- আইনে রাস্তায় যানবাহনের ধরনভেদে কোন গাড়ির কত গতি হবে সে সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই। মোটরসাইকেল চালকদের প্রতি হেলমেট মেইনটেইন ও পরিধানের কোন নির্দেশনা না থাকায় শুধুমাত্র আইনের হাত থেকে বাঁচতে নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহারিত হয়। শুধু চালককে সিটবেল্ট ব্যবহারে নির্দেশনা থাকায় যাত্রীদের সিটবেল্ট ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করেন। তাছাড়া ডোপ টেস্টের সঠিক ব্যবহার ও মনিটরিং না থাকায় এখনও অনেক চালক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালনা করেন। সর্বোপরি আমাদের দেশে শিশুদের জীবন রক্ষার্থে শিশু আসনের কোনো বিধান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-তে উল্লেখ নেই। এগুলো বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা জরুরি।

সড়ক পরিবহন আইনের সঠিক বাস্তবায়নে বিআরটিএ’র কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে হবে উল্লেখ করে নিসচা নেতা ইকবাল হোসেন বলেন- পুলিশে ট্রাফিক বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্টদের উপযুক্ত ট্রেনিংয়েরও প্রয়োজন। এছাড়া চালক, মালিক, পথচারী ও যাত্রীদের আইন সম্পর্কে জানাতে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। সর্বোপরি সড়ক ব্যবহারকারী সকলকেই নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তুলতে বিশেষ কর্মশালার প্রয়োজন। পাশাপাশি সঠিক ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে চালক তৈরি করতে হবে।

দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে সড়ক নিরাপদ করতে ‘নিসচা’ কাজ করছে মন্তব্য করে এম ইকবাল হোসেন আরও বলেন- সড়কে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রণীত সড়ক পরিবহন আইনের পুরোপুরি প্রয়োগই আমাদের মূল দাবি। অতএব এই আইন প্রয়োগ নিয়ে কোনো প্রকার অবহেলা বা গাফিলতি কিংবা কোনো অপশক্তির কালো হাতের থাবায় জাতির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- নিসচা’র কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিশু, নিসচা মহানগর শাখার সেক্রেটারি আব্দুল হাদি পাবেল, সহসম্পাদক আতিকুর রহমান মুন্না ও ডা. লোকমান হেকিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুজ্জামান মুক্তার, অর্থসম্পাদক মখসুদুর রহমান, প্রচার সম্পাদক আহসান হাবিব, যুবসম্পাদক ফখরুল আল হাদি এবং সদস্য মো. রুমান খান, নূর আলী, জিল্লুর রহমান সুজা ও রফিক আহমদ।