স্বাধীনতার মাসে রেকর্ড ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়া‌ল রেমিট্যান্স


  • দিনে গড়ে আসছে ৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার
  • ৩১ দিনে এলো ২১ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা
  • অর্থবছরের নবম মাসে এসে আবারও ঘুরে দাঁড়ালো রেমিট্যান্স

একদিকে রমজান অন্যদিকে ঈদ উপলক্ষে বেড়ে যায় কেনাকাটা। পাশাপাশি এ মাসে জাকাত ও দান-খয়রাত করেন বেশীরভাগ মানুষ। তাই পরিবার-পরিজনের বাড়তি ব্যয়ের কথা মাথায় রেখে রোজায় বেশি বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ ধারাবাহিকতায় সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে প্রবাসীরা ২০১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা গত সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এর আগে সর্বশেষ ২ বিলিয়ন বা দুইশ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল গত বছরের আগস্টে। ওই মাসে আসে ২০৩ কোটি (২.০৩ বিলিয়ন) ডলার।

চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই ও দ্বিতীয় মাস আগস্টে টানা দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। এরপর টানা ৬ মাস কেটে গেলে দুই বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে পৌঁছাতে পারেনি রেমিট্যান্স। অবশেষে অর্থবছরের নবম মাসে এসে আবারও ঘুরে দাঁড়ালো রেমিট্যান্স। অতিক্রম করলো দুই বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, স্বাধীনতার এ মাসে ২০১ কোটি ৭৬ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১০৭ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ২১ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকার বেশি। আর প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার বা ৬৯৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মহান স্বাধীনতার মাসে প্রবাসী ভাইয়েরা রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়াস কাজে লেগেছে। তাদের নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এতে বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা বৈধপথে (ব্যাংকিং চ্যানেল) রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ পাচ্ছেন। ঈদ সামনে রেখে চলতি মাসেও ভালো রেমিট্যান্স আসবে বলেও জানান তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, মার্চে মোট ২০১ কোটি ৭৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার বা ২৫১০ কোটি টাকার বেশি। বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ৪৮২ কোটি টাকার প্রবাসী আয় এসেছে। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭৩ কোটি ১৫ লাখ ডলার বা ১৮ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা এবং বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৫ লাখ ২০ হাজার ডলার।

তবে আলোচিত সময়ে আট ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো প্রবাসী আয় দেশে আসেনি। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) টানা দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে টানা ছয় মাস দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরেই থেমে যায়। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগস্টে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার, জানুয়ারিতে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। সদ্যবিদায়ী মার্চে এলো ২০১ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের বেশি।

এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে মোট ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১.০৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।