বাংলাদেশ এখন অমিত সম্ভাবনার দেশ। বাংলার কৃষক ও শ্রমিকের শ্রমে-ঘামে, ফসলে তথাকথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ এখন উদ্বৃত্ত খাদ্য ও বৈদেশিক রেমিট্যান্সে ভরে উঠেছে। ৫৩ বছরের পথপরিক্রমায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। বিদেশীদের দৃষ্টিতে স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশ ছিল এক তলাবিহীন ঝুড়ি। আর এখন সমৃদ্ধ-স্বনির্ভর বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন এক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। যে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ, সেই পাকিস্তানই এখন আর্থ-সামাজিক প্রায় সব সূচকেই পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের চেয়ে। দিনে দিনে সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো। এটা আরোপিতভাবে নয়, স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটেছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে ক্রমশ বেরিয়ে এসে শিল্প ও সেবা খাতমুখী হয়েছে আমাদের অর্থনীতি। উন্নয়নের মহাসড়কে ছুটে চলা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ এখন সাহায্য গ্রহীতা নয়, সাহায্য দাতার কাতারে উঠে এসেছে।
সম্প্রতি স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ দেশটির চামড়াজাত পণ্য ও জুতার রাজধানী হিসেবে পরিচিত এলচে ও আলিকান্তে অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদারের অংশ হিসেবে কতিপয় বৈঠকে যোগদান এবং কারখানা পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন।
এছাড়া, জনকূটনীতি ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের কনস্যুলার ও কল্যাণ কার্যক্রম সহজিকরণ বিষয়ক বৈঠক করেন। এ সময় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর রেদোয়ান আহমেদ ও স্পেন-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স, ঢাকার সভাপতি আশিক এলাহি চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদল স্পেনের বিখ্যাত জুতার ব্র্যান্ড পিকোলিনোসের কারখানা পিকোকাইজেন পরিদর্শন করেন। পিকোলিনোস গ্রুপ গত প্রায় ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের উন্নতমানের চামড়া ব্যবহার করে জুতা, ব্যাগসহ বিবিধ চামড়াজাত পণ্য তৈরি করে আসছে।
এ সময় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোসে মিগেল গার্সিয়া বাংলাদেশি চামড়া দিয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্য তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন। কোম্পানির প্রেসিডেন্ট খুয়ান ম্যানুয়েল পেরান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। রাষ্ট্রদূত গত প্রায় দেড় দশকে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও গভীর করার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদল এলচের অদূরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত একটি কৃষি খামার পরিদর্শন করেন। খামারের উদ্যোক্তারা জানান, খামারে উৎপাদিত সবজি স্পেনের ভেতরেসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশকিছু দেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে। রাষ্ট্রদূত এ ধরনের ভিন্নধর্মী ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য উদ্যোক্তাদের ভূয়ষী প্রশংসা করেন। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের আরও বহুমুখী ব্যবসায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদল আলিকান্ত চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে এক মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দেন। সভায় চেম্বারের ভাইস-প্রেসিডেন্ট খেসুস নাভারো আলবেরোলাসহ আলিকান্তের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল যোগ দেন।
বৈঠকে রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ও অবারিত বাণিজ্য সম্ভাবনার বিষয়ে চেম্বারকে অবহিত করে আলিকান্তের ব্যবসায়ী নেতাদের দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
এ বৈঠকে স্পেনের সুপরিচিত মশলা ব্র্যান্ড কারমেনসিটা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড লোপেজ, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সেন্ট্রাম, আরএমজি কোম্পানি জোসে মনলোর এসএল থেকে খাভিয়ের আর্টেগা, রাসায়নিক কোম্পানি ইনসোকো থেকে আলেহান্দ্রো রিবেলস, লেদার কোম্পানি সানচেজ আগুলোর থেকে খোসে আন্তোনিও সানচেজ ও পিকোলিনোসের রোজানা পেরানসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
আলিকান্ত ও এর আশেপাশে এলাকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে মতবিনিময় করেন। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন এবং সমাধান দেন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর অনুরোধ জানান। এছাড়া, বাংলাদেশ সরকারের পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য এবং ওয়েজ অর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য পদ গ্রহণের জন্য তিনি সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেন। এ সময় সীমিত আকারে কনসুলার সেবা প্রদান ও ওয়েজ অর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদের আবেদনও গ্রহণ করা হয়।