সুনামগঞ্জে জগন্নাথপুরে স্ত্রীর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের খরচ যোগাতে ব্যর্থ হয়ে কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতে চেয়েছিলেন এক দিনমজুর। এমন খবরে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন জগন্নাথপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করে মওকুফ করিয়েছেন বিল।
জানা যায়, উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের আছিমপুর গ্রামের দিনমজুর শামছুল হক সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য তাঁর স্ত্রীকে উপজেলার সদরের নগর মাতৃসদন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করেন। ভর্তির সময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ শামছুল হককে জানায় অপারেশন খরচ ১২ হাজার, ওষুধ ও অন্যান্য মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো বিল আসবে। তিনি তাতে রাজি হয়ে স্ত্রীকে ভর্তি করেন। পরে ওই রাতে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে এই দম্পতির একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।
এদিকে, অপারেশনসহ দুদিনে ক্লিনিকের বিল আসে ১৬ হাজার ৬৫০ টাকা। নানা জায়গায় চেষ্টা করে মাত্র ৪ হাজার টাকা যোগাড় করতে পারেন শামছুল। ক্লিনিকের বিলের জন্য আত্মীয়-স্বজনদের কাছে টাকা চেয়েও পান নি। শেষমেশ কোনো উপায় না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন নিজের কিডনি বিক্রি করবেন।
কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপনের জন্য সাংবাদিকের দ্বারস্থ হন শামছুল। কারণ জানতে চাইলে শামসুল জানান, কিডনি বিক্রি করে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করবেন।
কিডনি বিক্রির কথা শোনার পর সিলেট ভয়েসের জগন্নাথপুর প্রতিনিধি গোবিন্দ দেব তাঁকে থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে নিয়ে যান।
পরে জগন্নাথপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছে শামছুলের বিল মওকুফের জন্য সুপারিশ করেন।
শামছুল হক বলেন, অভাবের সংসার। দিন আনি, দিন খাই। স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা চিন্তা করে বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করি। ভর্তির সময় তারা বলেছিলেন বিল প্রায় ২০ হাজার টাকা মতো আসবে। তখন মনে করেছিলাম টাকা জোগাড় করতে পারব। কিন্তু নিজের স্বজনসহ অনেকের কাছে হাত পেতেও কোনো সাহায্য পাইনি। কোনো উপায় না পেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজের কিডনি বিক্রি করতে চেয়েছি। এসময় ওসি সাহেব সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
নগর মাতৃসদন ক্লিনিকের এমআইএস অ্যান্ড কোয়ালিটি এসোরেন্স কর্মকর্তা রাকিবুর রহমান বলেন, ‘ভর্তির সময় ওই ব্যক্তিকে অপারেশন বিল ১২ হাজার টাকা জানানো হয়। উনাকে আমরা বলেছিলাম সব মিলিয়ে বিল ২০ হাজার টাকার নিচে থাকবে। সেই অনুযায়ী বিল ১৬ হাজার ৬৫০ টাকা আসে। দুদিন পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান নিজে এসে তার বিল মওকুফের সুপারিশ করলে, মানবিক দিক বিবেচনায় ৪ হাজার টাকা জমা নিয়ে বাকি টাকা মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে ক্লিনিকে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। এরপর কর্তৃপক্ষে শামছুল হকের আর্থিক অবস্থার কথা জানাই। এতে তারা অপারেশনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও ওষুধের দাম দাবি করেন। পরে ওই দিনমজুরের কাছে থাকা ৪ হাজার টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা মওকুফ করানো হয়।