স্কুল বন্ধ রেখে প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাতে শিক্ষকরা

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ছেলের বউভাত অনুষ্ঠান। উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সেই অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। সে জন্য আজ রোববার (৮ জানুয়ারি) উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রেখে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। দাওয়াতে উপস্থিত হয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারাও।

প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বাড়ি কুড়িগ্রামের রৌমারীতে। তিনি কুড়িগ্রাম-৪ আসনের (রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী) সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। আজ প্রতিমন্ত্রীর রৌমারীর বাসভবনে তাঁর একমাত্র ছেলে সাফায়েত বিন জাকিরের বিবাহোত্তর বউভাত অনুষ্ঠান।

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকেরা আজ সংরক্ষিত ছুটি দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষকদের হাতে যে সংরক্ষিত ছুটি আছে, প্রচণ্ড শীতের কারণে সেই ছুটি তাঁরা দিয়েছেন।’

সব প্রতিষ্ঠানে একযোগে সংরক্ষিত ছুটি দেওয়ার প্রশ্নে ডিপিইও বলেন, ‘তাঁরা (প্রধান শিক্ষকেরা) জানিয়েছেন, প্রচণ্ড শীতে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে; অনেকে স্কুলে আসছে না। এ জন্য একদিন ছুটি দেওয়া হয়েছে। এই ছুটি দেওয়ার ক্ষমতা প্রধান শিক্ষকদের হাতে থাকে।’ প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়ের দাওয়াতে শিক্ষকদের অংশ নেওয়া বিষয়ে ডিপিইও বলেন, ‘দাওয়াতে যে কেউ যেতেই পারেন।’

সকালে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা তোলা হলেও কোনো শিক্ষক-কর্মচারী কিংবা শিক্ষার্থী নেই। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই চিত্র দেখা গেছে।

উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকেরা দাওয়াতে অংশ নিতে যাবেন। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ পাঠদান বন্ধ।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে একটি ক্লাস নিয়ে দাওয়াতে যেতে। তবে কোনো ক্লাস নেওয়া হয়নি। বিয়ের উপহার কেনার জন্য সবার কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে চাওয়া হয়েছিল। পরে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামকে ফোন করা হলে তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

পরে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাজমুল করিমকে ফোন করা হলে তিনি ওই অনুষ্ঠানে রয়েছেন বলে জানান। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একটি অনুষ্ঠানে আছি। গ্যাঞ্জামে কিছু শুনতে পাচ্ছি না। পরে নিরিবিলিতে কথা বলব।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আইবুল ইসলামকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সূত্র : আজকের পত্রিকা