সৌদি আরবের চলচ্চিত্রের জন্য ৬ ডিসেম্বর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ২০১৮ সাল থেকে দেশটি চলচ্চিত্রের পুনঃপ্রবর্তনের পর প্রথম স্বাধীন সিনেমা হলের উদ্বোধন হয়েছে এই দিন।
জেদ্দার উত্তরে আল মোহাম্মদিয়া জেলার ‘হাই জামিল’ আর্ট কমপ্লেক্সে দুটি স্ক্রিনের উদ্বোধন করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে ১৬৮ সিটের মূল কক্ষ ছাড়াও ৩০ সিটের কমিউনিটি স্ক্রিনিং রুম। এছাড়া সেখানে রাখা হয়েছে একটি মাল্টিমিডিয়া লাইব্রেরি এবং শিক্ষা সামগ্রী প্রদর্শনীর স্থান।
ভেন্যুটি বিশ্বের স্বাধীন সিনেমা হলের মতো চলচ্চিত্র প্রদর্শন করবে। ইউরোপীয়, উত্তর এবং লাতিন আমেরিকান সিনেমার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সৌদি আরব এবং আফ্রিকান চলচ্চিত্রগুলো চলবে।
পৃষ্ঠপোষকরা মনে করছেন, এই অঞ্চলের দর্শকদের রুচি এবং সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে কান এবং ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বশেষ আলোচিত সিনেমাগুলো এখানে নিয়ে আসা হবে। এছাড়া জেদ্দায় থাকা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফিলিপাইনের নাগরিকদের কথা বিবেচনায় নিয়ে একটি নির্দিষ্ট মৌসুমে জাপানি চলচ্চিত্র উৎসবের পরিকল্পনা নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
রোববার জেদ্দার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় সিনেমা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আর্ট জামিলের পরিচালাক অ্যান্টোনিয়া কার্ভার এ বিষয়ে বিদেশী গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘বাইরের লোকেরা বুঝতে পারে না জেদ্দায় আমাদের এই দর্শকরা কতটা শহুরে, ভাল ভ্রমণকারী, কৌতূহলী এবং তৃষ্ণার্ত।’ আর্ট জামিল মূলত একটি অ-বাণিজ্যিক শিল্প সংস্থা। যার লক্ষ্য সৃজনশীল সম্প্রদায়ের শিল্পী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দেখভাল করা। অ্যান্টোনিয়া বলেন, ‘এটি অনেক বড় একটি শহর। এখানে স্বাধীনভাবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর স্থান থাকাটা খুব প্রয়োজন ছিল।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শতাধিক দর্শক উপস্থিত ছিলেন। যেখানে নারী-পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান সমান ছিল।
চলমান রেড সি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় রোববার (৪ ডিসেম্বর) এই সিনেমা হলের উদ্বোধনের পর সোমবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এই ভেন্যুতে প্রথম সিনেমা প্রদর্শন হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। মিশরের ইউসেফ চাহিন পরিচালিত ওই সিনেমার নাম ছিল ‘আলেকজান্দ্রিয়া….হোয়াই?’।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আরব প্রোগ্রাম এবং ফিল্ম ক্লাসিকের পরিচালক আন্তোইন খালিফ বলেন, ‘সিনেমা মানুষের মধ্যে ঐক্য তৈরি করে, বিভেদ দূর করে। অনেকেই সিনেমা নিয়ে সমালোচনা করেন; তাদের মনে রাখা উচিত যে একটি জাতির রুচির বাইরে গিয়ে কেউ কিছু করে টিকতে পারে না। সিনেমাকে সবসময় নেতিবাচক অর্থে না দেখে বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে ভাবতে হবে। মানুষের জীবনের যেমন ভালো-মন্দ দিক থাকে সিনেমারও তেমন।’
সিনেমার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ২০২১ সালে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ ‘হাই জামিল’ কমপ্লেক্সটি শিল্পকলার বহু-বিষয়ক কেন্দ্র হিসেবে চালু করেছিল।
দেশটিতে এর আগে শিল্প সম্প্রদায়ের জন্য এমন উন্মুক্ত স্থান ছিল না। এতে একটি আর্ট ব্লক, মিউজিয়াম স্পেস, আর্টিস্ট স্টুডিও, পারফরম্যান্স স্পেস, একটি লাইব্রেরি, একটি আর্কাইভ রুম ছিল। এর সঙ্গে নতুনভাবে যোগ হলো স্বাধীন সিনেমা হল। এর ৯০ শতাংশ অর্থায়ন করা হয়েছে জামিল পরিবার থেকে। এই পরিবারের প্রধান আব্দুল লতিফ জামিল সৌদি আরবের মাল্টি মিলিয়নিয়র ব্যাবসায়ী।
অ্যান্টোনিয়া কার্ভার বলেন, ‘কমপ্লেক্স এবং সিনেমার লক্ষ্য হলো ‘সৌদি যুবকদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য, সৃজনশীলতা তরুণদের হাতে তুলে দেওয়া যাতে তারা নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারে। জেদ্দা এবং সৌদিজুড়ে এখন অতি-সৃজনশীল তরুণের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে সৌদি জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশের বয়স ৩৫ এর কম। গত ৩০ বছরে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা ইউটিউবে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে তারা মেধার প্রমাণ রেখেছেন। এ কারণেই দেশের প্রথম সিনেমা হলের উদ্বোধন বেশ তাৎপূর্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। আমাদের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে বৈশ্বিক সিনেমার ব্যাপকতা এবং গভীরতা দেখানো, যার গভীরতা আপনি বিশ্বের যেকোনো শহরে খুঁজে পাবেন।’