১৯৯৭ সালে জোর গুজব উঠেছিল— যমুনা সেতুতে কুকুরের রক্ত লাগছে। সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ছিল না, তেমনই যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল নানা গুজব। সে গুজব ডাল-পালা মেলতে মেলতে কুকুরের মাংস খাওয়া ও কুকুর শূন্য হয়ে যাচ্ছে বলে উত্তরবঙ্গ পর্ন্ত গড়িয়েছিল।
পদ্মা সেতু তৈরি শুরু পর থেকে সেতু গড়তে ‘মানুষের মাথা লাগবে’ বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। আর এই গুজবে শুধু ঢাকা নয় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। তিন দিনে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে তিনটি। যার দুটি ঘটে রাজধানী ঢাকায় এবং একটি পাশের জনপদ নারায়ণগঞ্জে। এরপর নেত্রকোনায় এক শিশুকে কলা কেটে হত্যা করে ব্যাগে ভরে মাথা নিয়ে যাওয়ার সময় সন্দেহভাজন যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয়রা। একলাখ মানুষের মাথা লাগবে বলে ছড়ানো উদ্ভট তথ্যে বিশ্বাস না করতে সরকারের পক্ষ থেকে সেসময় বিবৃতি দিতে হয়েছিল।
যতবার বড় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, ততবারই লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছে নানা কল্পকাহিনি। সেই কল্পকাহিনি প্রাণহানীকরও হতে দেখা গেছে। সমাজ এবং মনোবিজ্ঞান পাঠে বলা হয়, জনসাধারণ সম্পর্কিত যেকোনও বিষয়, ঘটনা বা ব্যক্তি নিয়ে মুখে মুখে প্রচারিত বর্ণনাই হলো গুজব। অতীতে যখন প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল না, তখন মুখে মুখে এটা প্রচার হতো। কিন্তু এখন প্রযুক্তির কারণে নানাভাবে এবং অনেক সহজে এটি ছড়ানো হয়ে থাকে। গুজব হলো— ভুল তথ্য এবং অসঙ্গত তথ্যর সমন্বিত একটি বিষয়।
কোন মানসিক অবস্থায় মানুষ প্রাণহানীকর গুজব ছড়ানোর কাজটি করে জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের মাধ্যমে এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়, তারা অনেক বেশি মোটিভেটেড থাকে। ফলে ভালো-মন্দ যাচাইয়ের ন্যূনতম সক্ষমতা তাদের থাকে না। এমনকি যে বিষয়টি তারা ছড়াচ্ছে, সেটার যৌক্তিকতা নিয়েও তারা নিজেদের কাছেই প্রশ্ন করতে পারে না। আর এই না পারার কুফল ভোগ করতে হয় সাধারণ মানুষদের। যারা সরল বিবেচনায় গুজব বিশ্বাস করে এবং সে অনুযায়ী অ্যাক্ট করে, এমন মানুষ তার নিজের স্বার্থে এবং অপরকে বিপদে ফেলার জন্য গুজব ছড়ায়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘গুজবের মনস্তত্ব আছে। যারা গুজব ছড়ায় তারা কোনও না কোনও মোটিভেশনকে সামনে রেখে ছড়ায়। এটি একেবারেই বিকৃত মানসিকতার ফল। একটা বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নিজের মতো করে কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া। সেটা ধর্মকেন্দ্রিক হতে পারে, ব্যবসাকেন্দ্রিক হতে পারে, রাজনৈতিক হতে পারে। অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন মূল উদ্দেশ্য। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে— পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক গুজব কেন ছড়ানো হয়েছিল? অভিষ্ট লক্ষ্যটা কী? আমার বিবেচনায় মানুষকে উসকে দিয়ে দেশের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করা ছিল উদ্দেশ্য, যাতে সরকার বিপদে পড়ে।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন