সিলেট সদর উপজেলায় সুরমা নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে মোগলগাঁও ইউনিয়নের শত শত পরিবার। ঘরবাড়ী নদীতে হারিয়ে অনেকেই এখন নিঃস্ব হওয়ার পথে। এমন বাস্তবতায় সুরমার ভাঙনে হুমকির মুখে থাকা মোগলগাঁও ইউনিয়নের তিনটি মানুষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের কাছে স্বারকলিপি প্রদান করেছেন। প্রথমে ইউনিয়নের যোগীরগাঁও গ্রামবাসী, এরপর চানপুর গ্রামবাসী ও সবশেষে ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান গেট সংলগ্ন লালাগাঁও গ্রামবাসী এই স্বারকলিপি প্রদান করেন।
তিন গ্রামের মানুষই পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাছে সুরমা নদীর ভাঙন থেকে তাদের রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
জানা গেছে, যোগিরগাঁও গ্রামে প্রায় ৪৫০ মিটার নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে প্রায় ৩০ বছর থেকে। এতে এক এক করে ১০০টি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকটা নিঃস্ব। তাদের কেউ এখন রাস্তায় আবার কেউ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে নিঃস্ব হয়ে বসবাস করছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, সর্বশেষ গত বন্যার পর সুরমা নদীর পানি কমতে শুরু করলে যোগীগাঁও গ্রামে ফের দেখা দেয় ভয়াবহ নদী ভাঙন। চোখের সামনেই ৪টি বাড়িঘর নদীতে তলিয়ে যায়। চোখের সামনে তাদের মাথা গুঁজার ঠাই হারিয়ে ফেলে পরিবারগুলো। এ বিষয়টি গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা শফিউল আলম জুয়েলকে জানানো হলে তিনি সিলেট বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নিয়ে ভাঙন পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি ৩৪০ মিটার নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ীভাবে কাজেরও আশ্বাস দেন। এরই প্রেক্ষিতে গত মার্চ মাসে ১৭৫ মিটারের কাজ শুরু হয়। যা যোগিরগাঁও গ্রাম রক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। স্বারকলিপিতে তারা বাকী ৩৪০ মিটার কাজের জন্য তারা জোর দাবী জানান।
এসময় তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বলেন, তাদের গ্রামে আরো ১৫টি বাড়ী রয়েছে একদম নদীর কবলে, সেগুলো রক্ষা করা জরুরি। তাছাড়া ২টি মসজিদ, ১টি স্কুল, পেট্রোল পাম্প সর্বোপরি সিলেট সুনামগঞ্জ হাইওয়ে সড়ক রক্ষা খুবই জরুরী বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এমপি মোগলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ অনুষ্ঠানে যাতায়াতকালে ৬নং ওয়ার্ডের যোগিরগাঁওবাসীর মানববন্ধন দেখে গাড়ী থামিয়ে তাদের অভিযোগ শোনেন। তখন গ্রামবাসী স্বারকলিপি প্রদান করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এমপি নদী ভাঙনের বাকী অংশটিতেও দ্রুত কাজের আশ্বাস দেন।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের অনুষ্ঠানের ফাঁকে ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের লালারগাঁও এবং চানপুর গ্রামবাসীও অনুরূপ দাবী তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
লালারগাঁও গ্রামবাসী বলেন, তাদের গ্রামে ৩৫০ মিটার নদী ভাঙনের কাজ হয়েছে। ১৫০ মিটারের বাকীগুলোর কাজ না হলে পূর্বের কাজের কোনো মূল্য থাকবে না। তাছাড়া ২০/২৫টি পরিবার অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যে কোন মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যেতে পারে। চানপুর গ্রামও নদী ভাঙনের ফলে রয়েছে বড় ঝুঁকির মুখে। তাদেরও দাবী ভাঙন প্রতিরোধে জরুরী পদক্ষেপ নেওয়ার।
সকলের দাবীর প্রেক্ষিতে মোগলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নদী ভাঙন রোধে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার উদ্যোগ নেবেন বলে গ্রামবাসীকে আশ্বাস প্রদান করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এমপি।