সুনামগঞ্জ-২ : নৌকার পালে হাওয়া, নতুনে ভরসা ভোটারদের

দিরাই ও শাল্লা এই দুটি উপজেলা নিয়ে সুনামগঞ্জ-২ আসন গঠিত। এ আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ৩ জন প্রার্থী থাকলেও সরকারদলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আল-আমিন চৌধুরী তার আসনের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে, হাটবাজার ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন এবং ভোট চাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠ গরম রাখার চেষ্টা করছেন।

এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী, বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী ড. জয়া সেনগুপ্তা কাঁচি মার্কা ও আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সচিব মিজানুর রহমান ঈগল পাখি মার্কা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকলেও তাদের প্রচার-প্রচারণা কম থাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আল-আমিন চৌধুরীর বলয়ের নেতাকর্মীরা মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তরুণ হওয়ায় সে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও মিটিং-মিছিল ও প্রচারণা করছেন। এতে তার সমর্থকেরা মনে করছেন ভোটারদের মন জয় হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-২ আসনে একজন তরুণ নেতৃত্বকেই ভোটাররা বেছে নেবেন এবং নেতৃত্ব পরিবর্তনের পক্ষে বেশিরভাগ নেতাকর্মী ও ভোটারদের অবস্থান রয়েছে বলে এমনটা-ই জানান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

ইতোমধ্যেই নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার, লিফলেট, ব্যানারে ছেয়ে গেছে হাটবাজার, বিভিন্ন গ্রাম ও সড়কে। বিভিন্ন গানের তালে মাইক বাজিয়ে ভোট চাওয়া হচ্ছে। পৃথকভাবে গণসংযোগ করছেন তারা। প্রার্থীদের লক্ষ্য একটাই-ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। ভোটের মাঠে একে অপরকে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। এ আসনে বর্তমান এমপি ডক্টর জয়া সেনগুপ্তাকে টেক্কা দিয়ে এবার নৌকা প্রতীককে মনোনীত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে আল-আমিন চৌধুরী।

দিরাই ও শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে ও বিভিন্ন মিছিল-মিটিং থেকে জানা গেছে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদদারি বেশিরভাগ নেতাকর্মী আল-আমিন চৌধুরীর পক্ষে নির্বাচনের মাঠে সরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডক্টর জয়া সেনগুপ্তা দাবি করে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় ও শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আব্দুস সাত্তার মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক রান্টু লাল দাস ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদদারি আর কোন নেতাকে নির্বাচনের মাঠে জয়া সেনগুপ্তার পক্ষে কাজ করতে দেখা যায় নি।

আল-আমিন চৌধুরী মনোনয়ন পাওয়ার পূর্বে গোটা কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মী একটু দূরে থাকলেও বর্তমানে বেশির ভাগ নেতাকর্মীরা তার সমর্থনে মাঠে রয়েছেন। তার পক্ষে মাঠে সরব ভূমিকায় রয়েছেন শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. অলিউল হক, শাল্লা উপজেলা পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান অমিতা রানী দাশ, জেলা যুবলীগের সদস্য ও উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান এ্যাড. দিপু রঞ্জন দাস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিধান চন্দ্র চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২নং হবিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুবল চন্দ্র দাস, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ও ৩নং বাহাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু, জেলা পরিষদের সদস্য টিকেন্দ্র চন্দ্র দাস, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুয়েব চৌধুরী, বাহাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পিযুজ কান্তি দাস, হবিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য সুধীর রঞ্জন দাস, আটগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন আল কাউসার, ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পলাশ চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক সন্দীপ সরকার সন্দীপ সহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী।

এছাড়াও দিরাই উপজেলায় আল-আমিন চৌধুরীর পক্ষে রয়েছেন দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাডভোকেট মো. সুহেল আহমেদ (ছইল মিয়া), সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া, যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায়, সাধারণ সম্পাদক ও দিরাই উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরী, সদ্য সাবেক মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান এ্যাড. রিপা সিনহা, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, জেলা পরিষদের সদস্য রায়হান মিয়া, জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রশীদ লাভলু, ইউপি চেয়ারম্যান একরার হোসেন, মিফতা চৌধুরী, জুয়েল মিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল মিয়া প্রমুখ।

দুটি উপজেলার আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মী আল-আমিন চৌধুরীর সমর্থনে মাঠে সরব থাকায় তাদের দাবি ভোটের মাঠে আল-আমিন চৌধুরীর পাল্লা ভারি হচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ডক্টর জয়া সেনগুপ্তা শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় তাকে টেক্কা দিয়ে দিরাই ও শাল্লা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন আল-আমিন চৌধুরী। প্রতীক বরাদ্দের আগে ৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রস্তুতি সভায় নৌযানে শাল্লা আসছিলেন ড. জয়া সেনগুপ্তা। এর পরে এখন পর্যন্ত আর কোনদিন শাল্লা আসতে দেখা যায় নি জয়া সেনগুপ্তাকে।

এদিকে, নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার আগে দিরাই ও শাল্লা উপজেলার কয়েকটি জায়গায় গণসংযোগ করলেও এর পর থেকে শাল্লায় একবারও আসতে দেখা যায় নি ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমানকে।