সুনামগঞ্জে ‘বিতর্কিত’ এক ব্যক্তিকে বিসিবির কোচ নিয়োগের চেষ্টা নিয়ে তোলপাল চলছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক জেলা কোচ পাভেল আহমদ বিসিবিকে কিছু না জানিয়েই বিদেশে পাড়ি জমান দুই বছর আগে। এরপর থেকে বির্তকিত সাদ্দাম হোসেনকে কোচ নিয়োগের চেষ্টা চলছে।
সুনামগঞ্জে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটার থেকে কোচিং কোর্স করা কোচ থাকলেও বিসিবি তাদেরকে নিয়োগ না দিয়ে রানিং খেলোয়াড় সাদ্দাম হোসেনকে নিয়োগের চেষ্টা করছে। শহরের বড়পারা এলাকার সাদ্দাম হোসেন একজন পরিচিত জুয়াড়ি। তার বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সদর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলাও দায়ের করে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই মামুন মিয়া ২০১৮ সালের ১৭জানুয়ারি জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে এক অভিযান পরিচালনা করেন এবং ওই দিন সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৩। জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা ও একজন সরকারি চাকুরে প্রভাব খাটিয়ে মামলা থেকে সাদ্দাম হোসেনের নাম কাটানোর চেষ্টাও করেন। পরবর্তীতে সাদ্দাম আদালতে হাজির হয়ে দোষ স্বীকারোক্তি ও করেন। আওয়ামীলীগের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত সাদ্দাম গত উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর এজেন্টও ছিলেন।
সম্প্রতি বিসিবির গেইম ডেভেলপমেন্টের অধীনে অনূর্ধ্ব-১৪ বিভাগীয় দল গঠনের প্র্ক্রিয়া শুরু হয়। জেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সদস্য সচিব, জেলা ক্রীড়া অফিসার সাবেক ক্রিকেটার সাদিকুর রহমান চৌধুরীকে অনূর্ধ্ব-১৪ দলের কোচের দায়িত্ব প্রদান করেন। সাদিক সপ্তাহ খানেক ধরে ক্রিকেটারদের অনুশীলনও করিয়ে আসছিলেন।
এরই মধ্যে সাদ্দাম হোসেন বিসিবির একটি ভুয়া নিয়োগপত্র দেখিয়ে জেলা অনুর্ধ্ব-১৪ দলের কোচ হিসেবে নিজেকে দাবি করেন এবং অনুশীলন করানোর চেষ্টা করেন। বিসিবির লোগো যুক্ত পেডে তার ছবি, নাম যুক্ত একটি পরিচয়পত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যাতে ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্বশীল কারোর স্বাক্ষরও নেই। এ নিয়েই চলছে তোলপাড়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়।
সুনামগঞ্জের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন ফখরুল ইসলাম নিপু। তার পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন সদ্য সমাপ্ত জাতীয় লিগে কিশাের দিশান। নিপু বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে্র স্কোয়াডেও ছিলেন। এর বাইরে জাহাঙ্গীল আলম বিসিবির কোচিং কোর্স লেভেল ১ পাশ করা কোচ। ক্লিন ইমেজধারী এসব সাবেকদের বাদ দিয়ে বিসিবির কোচ করার চেষ্টা করা হচ্ছে সাদ্দামকে। যার বিরুদ্ধে খেলোয়াড়দেরও নানা অভিযোগ আছে।
সাদিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সাদ্দাম হোসেন বর্তমানের খেলোয়ার। তিনি কীভাবে কোচ হবেন। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ আছে, সে সুরমা ক্রিকেট একাডেমি পরিচালনা করে আসছে। এই অবস্হায় বিসিবি থেকে নির্দিষ্ট কাউকে জেলা ভিত্তিক দলগুলোর দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে দিয়েই দলগুলো পরিচালনা করতে পারবেন। ‘
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা ক্রীড়া সংস্হার সদস্য সচিব আল আমিন বলেন, ‘আমরা চাই সাদিকুর যেহেতু কোচ হিসেবে কাজ করছেন, সেই থাকুক ওখানে, এখন বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন এডিএম।’
অন্যদিকে, নিজেকে সাড়ে তিন বছর হয় সুনামগঞ্জ অনুর্দ্ধ ১৪ ক্রিকেট দলের কোচ দাবি করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘এই মাঠে পাভেল চৌধুরী নামের একজন অনুর্দ্ধ ১৪ দলের কোচ ছিলেন। তিনি দেশের বাইরে চলে যাবার পর সাড়ে তিন বছর হয় কোচের দায়িত্ব পালন করছি আমি। সাদিককে অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এখন সাদিক কোচের দায়িত্ব পালন করতে চান। অথচ সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরাও আমাকে কোচ হিসেবে কাজ করার কথা বলেছেন। চিঠিতে স্বাক্ষরের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন এটা তারা কেন দিলেন না, তারাই বলতে পারবেন। আমাকে যেভাবে দেওয়া হয়েছে, আমি সেভাবে হস্তান্তর করেছি।’
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম বললেন, ‘এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয় বিসিবি। তবুও জেলা ক্রীড়া অফিসারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবো আমি।
সাদ্দামের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সে ২০১৮ সালের জুয়া মামলার আসামি, এবং বিগত নির্বাচনগুলোতে নৌকার এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে।এবং কোচ হওয়ার জন্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা দরকার সেটি তার নেই।’