বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সুনামগঞ্জে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী হাফিজ আহমদ সোমবার আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন। কিন্তু আদালতের বারান্দা থেকে কয়েকজন যুবক তাকে তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন একজন আইনজীবী।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. নজরুল ইসলাম এবং আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. মল্লিক মঈনুদ্দিন সোহেল এ ধরনের কোনো ঘটনা শুনেননি বলে জানান। সোমবার রাত ৯টায় সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি নাজমুল হক জানান, হাফিজ ও তার ভাই জহুর দুজনেই সন্ধ্যায় থানায় এসে দেখা করে গেছেন। এখন জহুর তার সামনে আছেন। তারা ওঠিয়ে নেওয়ার কোনো অভিযোগ জানাননি।
হাফিজ আহমদ গত দুই সেপ্টেম্বর ৯৯ জনের নামোল্লেখ এবং ২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সুনামগঞ্জের দ্রুত বিচার আদালতে এই মামলাটি করেছিলেন। মামলা দায়েরের এক মাস ২০ দিন পর গত ২৩ অক্টোবর সুনামগঞ্জের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামা দিয়ে বলেন, ঘটনার বিষয়ে কোনো কিছুই জানি না, কোনো আসামিকে চিনি না।
মামলাটি আপস হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি আসামিদের বিনা বিচারে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। এ বিষয়ে দ্রুত বিচার আদালত সোমবার তাকে আদালতে তলব করেছিলেন। এ কারণেই তিনি আদালতে এসেছিলেন।
সুনামগঞ্জ জেলা বারের অ্যাড. নাজমুল হুদা হিমেল জানান, এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামির পক্ষে তিনি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি ফৌজদারী বিবিধ মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলাতেই হাফিজ আহমদ হলফনামা দিয়েছেন। এই হলফনামার অনুলিপি তিনি দ্রুত বিচার আদালতে দাখিল করেছিলেন। এ বিষয়ে সরাসরি বক্তব্য জানতে বাদীকে সোমবার আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
নাজমুল হুদা হিমেল বলেন, সকালে বাদী আদালতে এসেছিলেন। পরে শুনি বারান্দা থেকে কয়েকজন যুবক তাকে জোর করে বের করে নিয়ে গেছেন। কে বা কারা এটা করেছেন জানি না।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হাফিজ আহমদের ফোনে যোগাযোগ করলে ফোন ধরেন আব্দুল মজিদ নামের আরেকজন। তিনি হাফিজের প্রতিবেশি।
মজিদ জানান, হাফিজ ফোনটি বাড়িতে রেখে সকালে কোর্টে গেছেন। দুপুরের পর তারা জানতে পেরেছেন কয়েকজন যুবক হাফিজকে আদালতের বারান্দা থেকে ধরে নিয়ে গেছেন। মামলা আপসের দরখাস্ত করার নাকি তারা ক্ষুব্ধ। বিকেলে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন ওই যুবকেরা তাকে সদর থানায় দিয়েছেন।
রাত ৯টায় সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি নাজমুল হক এই প্রতিবেদককে বলেছেন, হাফিজ ও তার ভাই জহুর সন্ধ্যায় থানায় এসে দেখা করে গেছেন। এখন আমার সামনে জহুর আছেন। তারা এ ধরনের কোনো অভিযোগ জানাননি। হাফিজ তার নিজের বাড়িতেই আছেন।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দুজন গুলিবিদ্ধসহ অনেকেই আহত হন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ আহত একজন হলেন জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলা এরোয়াখাই গ্রামের বাসিন্দা জহুর আলী (৩০)। তিনি বসবাস করতেন সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাধনপাড়া এলাকায়। ঘটনার প্রায় এক মাস পর জহুর আলীর ভাই মো. হাফিজ আহমদ (৪৫) বাদী হয়ে সুনামগঞ্জের দ্রুত বিচার আদালতে ৯৯ জনের নামোল্লেখ এবং আরও ২০০জনকে আসামি করে এই মামলাটি দায়ের করেছিলেন।
এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকসহ বেশ কয়েকজন জেল খেটেছেন। এই পর্যন্ত অজ্ঞাতনামা আসামিসহ ৭০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।