সুনামগঞ্জে খাদ্য সংকটে বানভাসিরা

উজানের পাহাড়ি ঢল এবং বিরামহীন বৃষ্টিপাতে পানিতে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ জেলা। মানুষ ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রে। আশ্রয় সংকটের পাশাপাশি বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। এছাড়া পশুখাদ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন গৃহপালিত পশুর মালিকরা। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও পুকুরের মাছ।

সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সাথে সাথেই খুলে দেওয়া হয় জেলার ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১৯ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন এ সংখ্যা আরও বেশি। সময় যত যাচ্ছে, আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ত্রাণ সহায়তার কথা থাকলেও সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায় বৃহস্পতিবার (২০ জুন) পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

শাল্লা উপজেলার বাসিন্দা হরিলাল দাস বলেন, ঘরের পানি কোমর সমান। পরিবারের সবাইকে নিরাপদে পাঠালেও ঘরের নিরাপত্তার স্বার্থে আমি বাড়িতেই অবস্থান নিয়েছি। প্রশাসন শুকনো খাবার দিয়েছে। এতে একবেলার আহার জুটেছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা কাঞ্চনমালা বলেন, ভেজা কাপড়ে দিনযাপন করছি। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাইনি। সবাই আসছে, দেখছে, চলে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের ১০টি উপজেলার ৪টি পৌরসভা ও ৭৪টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। ১ হাজার ১৮টি গ্রামের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে সদর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার উপজেলা বেশি আক্রান্ত। গতকাল বুধবার রাত থেকে জেলার শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় পানি বেড়েছে। এসব উপজেলায় রাস্তাঘাট, বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। জেলার মোট ৫৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবন, ব্যক্তিমালিকানা ভবনে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক যত সংঘটন খাবার বিতরণ করছে তারা সবাই শহর কেন্দ্রিক কাজ করছে। অথচ গ্রাম পর্যায়ে মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভারতের চেরাপুঞ্জি ও সুনামগঞ্জে অন্যান্য দিনের তুলনায় বৃষ্টি কম হওয়ায় শহরে পানি কমেছে। তবে শহরের পানি হাওরে প্রবেশ করায় গ্রামাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ নিচ্ছি। আমাদের উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সকল উপজেলার ইউএনওকে ইতিমধ্যেই অবগত করা হয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।