সুনামগঞ্জে কুস্তি খেলার নামে বিএনপি নেতার চাঁদাবাজি!

সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী, আঞ্চলিক ও জনপ্রিয় কুস্তি খেলাকে কেন্দ্র করে জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতির চাঁদাবাজি বন্ধ ও ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত কুস্তি উৎসব বানচালের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

বুধবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষে অনুষ্ঠিতব্য কুস্তি খেলা আয়োজন উপ-কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান এই লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগটির অনুলিপি তিনি সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসিকেও দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, শান্তিগঞ্জ ও জামালগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে কুস্তি। বর্তমানে ঐতিহ্যের এই খেলায় মেতেছে গ্রামগুলো। ঐতিহ্যের এই খেলাকে কেন্দ্র করে জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূরুল হক আফিন্দি হঠাৎ ‘সুনামগঞ্জ জেলা কুস্তি ফেডারেশন’ নাম দিয়ে বিভিন্ন গ্রাম থেকে কুস্তিগীর ও অনুরাগীদের জিম্মি করে ৩ হাজার টাকা করে চাঁদা তুলছেন। এর আগেও তিনি বিভিন্নভাবে চাঁদাবাজি করে মামলায় জেলও খেটেছেন।

আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ঐতিহ্যবাহী এই কুস্তিকে বড় পরিসরে জেলা ব্রান্ডিং করে জাতীয়ভাবে প্রচারণায় নিয়ে আসতে ৫ উপজেলার কুস্তি অনুরাগীদের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা ক্রীড়া সংস্থা সুনামগঞ্জ স্টেডিয়ামে কুস্তি খেলা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। কুস্তিকে জনপ্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ খেলা হিসেবে জাতীয়ভাবে প্রচারণায় নিয়ে আসার জন্য ৫০ টাকা টোকেন মানি (প্রবেশ ফি) নির্ধারণ করে প্রচারণা চলছে। টোকেন মানি থেকে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দলকে ১০ হাজার টাকা, জার্সি, গামছা, ট্রফি এবং বিজয়ী ও রানার আপ দলকে ক্রেস্ট ও আর্থিক সম্মানী দেওয়া হবে।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি দাবিদার নূরুল হক আফিন্দি বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে খেলার নামে চাঁদাবাজি করছেন। তার চাঁদাবাজি আড়াল করতে জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত কুস্তি উৎসবের টোকেন মানির বিষয়টি সামনে নিয়ে এসে কুস্তিগীর ও এলাকাবাসীর মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। এই আয়োজনের বিরুদ্ধে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার টুকেরবাজারে তিনি সভা ডেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার অনুরাগীদের দিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিরুদ্ধে আপত্তিকর ভাষায় লেখালেখি করাচ্ছেন। চাঁদাবাজি বন্ধ ও ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করায় তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগে দাবি জানিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল নোমান।

সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ ও কুস্তি আয়োজন উপ-কমিটির সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, মাননীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয় ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা। কুস্তি খেলাকে জাতীয়ভাবে আলোচনায় নিয়ে আসতে সামান্য টোকেন মানি নিয়ে আমরা ৫টি উপজেলার অংশগ্রহণে আয়োজন করেছি কুস্তি খেলা। এখন হঠাৎ নিজেকে কুস্তি ফেডারেশনের স্বঘোষিত সভাপতি দাবি করে জনৈক নূরুল হক আফিন্দি আমাদের আয়োজনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার করছেন। পাশাপাশি তিনি ঐতিহ্যবাহী এই কুস্তি খেলার নামে গ্রামগুলোকে জিম্মি করে চাঁদাও তুলছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমি লিখিত অভিযোগ করেছি।

সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কুস্তি নিয়ে চাঁদাবাজি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক সভার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে একটি লিখিত অভিযোগ আমার অফিসে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কুস্তির নামে চাঁদাবাজি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ষড়যন্ত্র ও কুস্তি খেলা বানচালের চেষ্টার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি।