সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশিরা

গত এক বছরে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের রাখা টাকার পরিমাণ নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। গত এক বছরে (২০২১ সাল) বাংলাদেশিরা সুইস ব্যাংকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ জমা করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালে সেখানকার ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা; যা দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ করা জমা।

এসএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর সুইজারল্যান্ডের শতাধিক ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত ৮৭২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে পৌঁছেছে। সুইজারল্যান্ডের প্রতি ফ্রাঁ বাংলাদেশের ৯৫ টাকার সমান। সেই হিসেবে সেখানকার ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মানুষ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বৈধ-অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ গচ্ছিত রাখেন। দেশটির কঠোর গোপনীয় ব্যাংকিং নীতির কারণে সারা দুনিয়ার মানুষ সেখানে অর্থ জমা রাখেন।

সুইজারল্যান্ডের আইনে গ্রাহকদের গোপনীয়তা দৃঢ়ভাবে রক্ষার নিয়ম রয়েছে। এ আইনের ফলের দেশটির ব্যাংকগুলো কোনো পরিস্থিতিতেই গ্রাহকদের তথ্য কারও কাছে প্রকাশে বাধ্য নয়। ফলে কারা, কেন অথবা কীভাবে অর্থ ব্যাংকে রাখছেন, সে সম্পর্কে ব্যাংকগুলো কাউকে কোনো তথ্য দেয় না।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২০ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ তার আগের বছরের তুলনায় কম ছিল। ওই বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ হাজার ২০৩ কোটি টাকা।

তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁ। ২০১৮ সালে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি সুইস ফ্রাঁ। আর ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ।

তবে ২০২১ সালে বাংলাদেশিদের মতো সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের অর্থ গচ্ছিত রাখার পরিমাণও ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের গচ্ছিত অর্থ আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে ৩০ হাজার কোটি রুপিতে পৌঁছেছে। যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে ভারতীয়দের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ জমা।

পিটিআই বলছে, ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের অর্থ জমার পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ বা ২০ হাজার ৭০০ কোটি রুপি। এর ফলে সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের অর্থ জমা টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের নাগরিকদেরও গত বছর সুইস ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ বেড়েছে। ২০২১ সালে পাকিস্তানিরা সুইস ব্যাংকে জমা করেছেন ৭১২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ।

সুইস ব্যাংকে অর্থ রাখার শীর্ষে কারা?

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে সবোচ্চ পরিমাণ অর্থ জমা করেছেন ব্রিটিশ নাগরিকরা। সুইস ব্যাঙ্কে ৩৭৯ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ জমা রেখে এই তালিকার সবার শীর্ষে আছে যুক্তরাজ্য।

আর এরপরই দ্বিতীয় স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন নাগরিকরা ১৬৮ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ জমা রেখেছেন সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে। তালিকায় মাত্র এই দুটি দেশের নাগরিকরা ১০০ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁর ওপরে অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন।

সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা রাখা অন্য শীর্ষ ১০ দেশ হল— ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জার্মানি, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, হংকং, লুক্সেমবার্গ, বাহামা, নেদারল্যান্ডস, কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ এবং সাইপ্রাস।

এই তালিকায় ভারত রয়েছে ৪৪তম স্থানে। এরপরই আছে পোল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, বাহরাইন, ওমান, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, মরিশাস, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, হাঙ্গেরি এবং ফিনল্যান্ড।

২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের ২৩৯টি ব্যাংকের সমন্বয়ে সুইস ব্যাঙ্কিং স্পেকট্রামে গ্রাহকের আমানত বেড়ে প্রায় ২ দশমিক ২৫ ট্রিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়িয়েছে।