দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনের ভোটের লড়াই। মনোনীত, নির্দেশিত আর সমর্থিত নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
এই আসনে চূড়ান্ত লড়াইয়ে টিকে আছেন ৬জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে দুজন বাদে বাকি ৪জনকে নিয়ে নির্বাচনের শুরু থেকেই ব্যাপক আলোচনা।
এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকার নাহিদকেই এগিয়ে রাখা হয়েছিলো প্রথম থেকে। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে অনড় আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেনকে মনে করা হচ্ছিলো আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দী। তবে দুজনের মধ্যে নেতাকর্মীদের প্রচারণায় নিজেদের শিবিরের ভোট ভাগাভাগির অঙ্কে বিশেষ সুবিধা পেয়ে যাবেন জাতীয় পার্টির মনোনীত ও সিলেট-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন, এমন আলোচনাও চলছিলো জোরেশোরে।
তবে প্রচারণার শেষদিকে এসে হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বড় অংশ তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে বসলে আবারও উলট-পালট হয়ে যায় সিলেট-৬ আসনের ভোটের অঙ্ক।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই আসনের ৪ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। গোলাপগঞ্জে রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের একটি অংশ সব সময় তার সাথে সক্রিয়। তবে একই সময় আওয়ামী লীগের অন্য একটি অংশ তার বিরুদ্ধেই ছিলো। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একইরকম অবস্থা। নির্বাচনের প্রথম থেকেই তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ও সাবেক ৪ বারের এমপি হিসেবে তাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবারও এমপি হিসেবে নিয়ে যাবেন বলে ধারণা করছিলেন অনেকেই।
তবে নির্বাচনী প্রচারণার মাঝ পথ থেকে হঠাৎ করেই ঢাকায় তলব করা হয় নাহিদকে। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের নিষ্ক্রিয় অংশ হঠাৎ সরব হয়ে ওঠে। তারা সমর্থন দেয় সদ্য গঠিত দল তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরীকে।
নির্বাচনের শুরু থেকে তাকে গোণায় না ধরলেও শেষদিকে এসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সাবেক এই বিএনপি নেতা। অনেকেই মনে করছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে এই আসন থেকে বিজয়ী করে নেওয়া হবে।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সরওয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তার ভাষ্যমতে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক প্রার্থী হয়েছেন। ভোটের মাঠে তার সাথে রয়েছে আওয়ামী লীগের শক্ত একটি অংশ। সেই সাথে দীর্ঘদিন ধরে দুই উপজেলার মানুষের জন্য কাজ করায় ভোটারদের কাছেও তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। একদিকে নির্বাচনী মাঠে রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত অন্যদিকে ভোটাররা। দুই মিলিয়ে তার অবস্থান জয়ের কাছাকাছি। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ হঠাৎ করে শমসের মুবিনের সাথে যোগদান করায় সরওয়ার হোসেনের কাছ থেকে সরে এসেছেন অনেক নেতাকর্মী।
অপরদিকে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী সেলিম উদ্দিন সিলেট-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। এবার তিনি সিলেট-৬ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তৃণমূলে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। ঈগল প্রতীকের পরেই ভোটাররা তাকেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন। আওয়ামী লীগ তিন ভাগে বিভক্ত হওয়ায় জয়ের পথ খোলা থাকতে পারে সেলিম উদ্দিনের। ভোটের মাঠে ঈগল ও লাঙ্গলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে অন্য দুইজন প্রার্থী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আতাউর রহমান আতা ও ইসলামি ঐক্যজোটের সাদিকুর রহমান এখন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকলেও তাদের খুব একটা প্রচারণা নেই ভোটের মাঠে।
তবে নানা নাটকীয়তার জন্ম দেয়া সিলেট-৬ আসনে শেষ পর্যন্ত কি হতে পারে তা জানার জন্য ৭ তারিখের ভোটের ফলাফল প্রকাশ অবধি অপেক্ষা করতে হচ্ছে ভোটারদের।