দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর), নৌকা এতোদিন এগিয়ে থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ায় ভোটারদের মধ্যে নতুন আলোচনা শুরু হচ্ছে।
এ আসনে সাত জন প্রার্থী নির্বাচন করবেন। এই দুই উপজেলায় এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থনের মধ্যে দুইভাগে বিভক্ত! সাবেক সংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ঘরানার নেতা দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান পৌর মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান।
এই আসনে ভোটারদের মধ্যে এই প্রার্থীর পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি মাঠ দখলের চেষ্টায় কাজ করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও গণফোরাম সমর্থিত প্রার্থী মোকাব্বির খান, ও সাবেক সংসদ জাতীয় পার্টি নেতা ইয়াহইয়া চৌধুরী সহ অন্যান্য প্রার্থীরা।
সিলেট-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী ৭ প্রার্থী হলেন, বর্তমান সাংসদ ও গনফেরাম নেতা (সূর্য প্রতীক), সাবেক সাংসদ ও জাতীয় পার্টি নেতা ইয়াহয়া চৌধুরী এহিয়া (লাঙ্গল প্রতীক), তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী (সোনালী আঁশ প্রতীক) আব্দুর রব মল্লিক, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী মো. জহির (ডাব প্রতীক), এনএনপি মনোনীত প্রার্থী (আম প্রতীক) মো. মনোয়ার হোসেন।
তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ ঘরানার নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমানের ট্রাক প্রতীকের মধ্যে। বাকি ৫ প্রার্থী হয়তো নিয়ম রক্ষায় নির্বাচনী মাঠে শরিক হয়েছেন।
স্থানীয় বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রার্থীদের দু’জন বাদে কাউকে তারা দেখেননি। অচেনা প্রার্থী হয়েছেন, মো. জহির ও মো. মনোয়ার হোসেন।
বিএনপি নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট-২ আসনে বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলী ফ্যাক্টর হয়ে আছেন। ইলিয়াস এমপি থাকাকালে বিশ্বনাথ-ওসমানীনগরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। গত নির্বাচনে গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান ইলিয়াস আলীর পরিবার ও বিএনপির সমর্থনে ভোট পেয়ে জয়ী হলেও এবার পাচ্ছেন না। কারণ নির্বাচিত হওয়ার পর মোকাব্বির খানের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের।
এদিকে, বিএনপিবিহীন নির্বাচনে প্রার্থীরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কেউ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর নাম প্রচারণায় ব্যবহার করছেন। বিএনপির ভোট টানতে জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরীসহ অনেকে ইলিয়াস আলীকে নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
এদিকে মাঠের সমীকরণে শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মুহিবুর রহমান আলোচনায় থাকলেও সজ্জন এবং স্থানীয়দের সাথে সুসম্পর্কে শেষ পর্যন্ত শফিকুর রহমান চৌধুরীই এগিয়ে থাকবেন, এমন ধারণা সাধারণ ভোটারদের।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, জমিদার হাসন রাজা চৌধুরীর পরিবারকে পরাজিত করে ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মুহিবুর রহমান। ২০০৯ সালে নৌকা প্রতীককে পরাজিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান হন ও ২০২২ সালের ২ নভেম্বর বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় পার্টি থেকে অংশ নিয়ে ইলিয়াস আলীর কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় মুহিবুর রহমান নির্বাচন করেননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরীর কাছে এবং ২০১৮ সালে গণফোরামের নেতা বর্তমান এমপি মোকাব্বির খানের কাছে পরাজিত হন মুহিব। শফিকুর রহমান চৌধুরী ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সাবেক এমপি নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করেন। পরবর্তীতে জোটগত সিদ্ধান্তের কারণে সিলেট-২ আসনে নির্বাচন করেননি শফিকুর।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনের দুই উপজেলায় রয়েছে ১৬টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে বিশ্বনাথে আটটি ও ওসমানীনগরে রয়েছে আরও আটটি ইউনিয়ন। এই আসনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১২৮টি। এর মধ্যে বিশ্বনাথ উপজেলায় স্থায়ী ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৭৪টি ও ওসমানীনগরে রয়েছে ৫৩টি। এছাড়া ওসমানীনগরে রয়েছে অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র আরও একটি। সেইসঙ্গে ভোট কক্ষ রয়েছে ৭৭৩টি। বিশ্বনাথে ৩৯২টি ও ওসমানীনগরে ৩৫২টি স্থায়ী ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া বিশ্বনাথে আরও ২৯টি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র রয়েছে। আসনে ভোটার রয়েছেন তিন লাখ ৪৪ হাজার ৭২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৭৬ হাজার ১৪৭ এবং নারী এক লাখ ৬৮ হাজার ৫৮২ জন। বিশ্বনাথে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ভোটার রয়েছেন এক লাখ ৮৪ হাজার ১৪৯ জন এবং ওসমানীনগরে নারী-পুরুষ মিলেয়ে ভোটার রয়েছেন এক লাখ ৬০ হাজার ৫৮০ জন।