কেবল একটি দিন ছাড়া বছরজুড়ে অবহেলায় পড়ে থাকে সিলেটের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার লাগোয়া এই কবরস্থান ঘিরে অবাধে আনাগোনা থাকে তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সীদের। কবরস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে-বসে হাসি-ঠাট্টা ও খোশগল্পের পাশাপাশি টিকটক ভিডিও ধারণ করতে দেখা যায় অনেককে। এতে করে কবরস্থানের পবিত্রতাও রক্ষা হচ্ছে না।
আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে দিবসটি। শহীদ মিনারের লাগোয়া শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শনিবার সকাল থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষেই আজ এই কবরস্থানের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হচ্ছে। কিন্তু বছরজুড়ে অরক্ষিত ও অবহেলায় থাকলেও কারও ভ্রুক্ষেপ পড়ে না সেখানে।
সিলেট নগরের কেন্দ্রস্থলের জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কের পাশে ৩৩ শতক জায়গাজুড়ে আছে শহীদ মিনার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধযুদ্ধের সময় সদর হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে কর্তব্যরত অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে নিহত চিকিৎসক শামসুদ্দিন আহমদসহ তাঁর সহকর্মীদের কবরস্থান। সিলেটের বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেয়া বীর শহীদদের স্মরণ করতে প্রতিদিন সকল বয়সী মানুষ এখানে এসে পরম শ্রদ্ধায় অবনত হোন।
তবে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে বছরের সবসময়ই সাধারণ মানুষের আনাগোনা থাকে অবাধে। এখানে তরুণ-তরুণীদের অবাধ বিচরণে কবরস্থানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।
অভিযোগকারীদের ভাষ্য, প্রায় প্রতিদিনই এখানে হাসি-ঠাট্টা ও গালগল্পের পাশাপাশি টিকটক ভিডিও ধারণ করতে দেখা যায় অনেককেই। অনেকে জানেনই-না এখানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গণকবর কিংবা শহীদ বুদ্ধিজীবিদের কবরস্থান।
সিলেটের গণমাধ্যমকর্মী লতিফুর রহমান উজ্জ্বল বলেন, বুদ্ধিজীবী কবরস্থান একটি সম্মানজনক স্থান। এটি একটি পবিত্র জায়গা। এখানে কোনো বসার ব্যবস্থা নেই, তবুও দেখবেন- মানুষ ফুলবাগানের রেলিংয়ে বসেন। এটা কোনোভাবেই ঠিক না।
তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে গল্পের ছলে কোনো অবস্থাতেই যেন পবিত্রতা নষ্ট না হয়, সেই বিষয়ে সবার খেয়াল থাকা জরুরি। তাছাড়া কেবল নির্দিষ্ট দিনেই নয়, বছরের সব দিনই আমাদের স্মরণে রাখা উচিত বুদ্ধিজীবীদের।
কলেজ শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার ইরা বলেন, বুদ্ধিজীবীদের স্মরণার্থে এই কবরস্থানকে নান্দনিক রূপ দেয়া হয়েছে। নতুন প্রজন্মের সবাইকে এখানে আসা উচিত। তবে অবশ্যই কবরস্থানের পবিত্রতা যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার।
মাদরাসা শিক্ষার্থী মাজিদ হোসাইন বলেন, বে-পর্দা অবস্থায় মেয়েরা এখানে এসে ভিডিও করা, টিকটক করা- কোনোটিই কাম্য নয়। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোতে কোনো আপত্তি নেই।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের আগে এই জায়গা অনেকটা সংরক্ষিত ছিল। এখানে সবাই আসতে পারত না। এখন দেখতে পাচ্ছি, দায়সারাভাবে এখানকার ব্যবস্থাপনা চলছে। দায়িত্বশীল মহল বিশেষ করে সিসিক ও পুলিশ প্রশাসনকে এই কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, কবরস্থানের পবিত্রতার রক্ষার দায়িত্ব সিসিকের নয়, পুলিশ প্রশাসনের।
এদিকে সচেতন মহলের অনেকেরই দাবি, কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি একজন সুদক্ষ গাইড নিয়োগ করে সিলেটের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের ইতিহাস, ঐতিহ্য প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ কবরস্থানের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হওয়ার ব্যাপারে বলেন, এখন পর্যন্ত এরকম অভিযোগ পাইনি। তবে আমরা এ ব্যাপারে কথা বলব।
সিলেটের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের ইতিহাস, ঐতিহ্য প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে গাইড নিয়োগের আহ্বানকে নতুন চিন্তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়েও জেলা প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আলোচনায় বসব। গাইড নিযুক্ত করা যায় কি না সেটিও আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেব।