সিলেট নগরবাসীর চাপা ক্ষোভ আর কষ্টের নাম ‘বাড়ি ভাড়া’

সাড়ে ২৬ বর্গ কিলোমিটার সিলেট নগরে গড়ে ওঠা অট্টালিকার ফাঁকে ফাঁকে অসংখ্য গল্প। এসব গল্পের মাঝে চাপা একটি কষ্টের নাম বাড়ি ভাড়া। কেউ দিচ্ছেন, আবার কেউ নিচ্ছেন। নানান শর্তের মাঝেও শান্তি খোঁজার চেষ্টা করছেন ভাড়াটিয়ারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর অলিগলি সবখানে বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু এসব বিজ্ঞপ্তির আড়ালে একাধিক শর্ত। তবুও যে সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থে নিতেই হবে বাড়ি ভাড়া। তাইতো হন্যে হয়ে ভাড়া খুঁজছিলেন আহমেদ জামিল নামের এক যুবক। নগরীর ফাজলচিশত এলাকায় বাসা ভাড়া খোঁজার সময় কথা হয় তার সাথে। ক্ষোভ প্রকাশ করে বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞপ্তির আড়ালে থাকা একাধিক শর্তের কথা সিলেট ভয়েসকে জানান তিনি।

বলেন, ভাড়া মাত্রাতিরিক্ত। এর মাঝে একাধিক শর্ত। মেহমান বেশি আসা যাবে না, দুই কক্ষের বাসায় পরিবারে পাঁচ জনের বেশি থাকা যাবে না। এতো এতো শর্তের মাঝেও ভাড়া নিতে আগ্রহী হলেও ভাড়া শুনে আঁতকে ওঠার মত।

শর্ত যাই হোক এটাতো মানতে বাধ্যই, কিন্তু লাগামহীন ভাড়ার বোঝা যে কত ভারি সেটা কে বুঝে! নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক জানালেন গত দুই বছরে দুইবারে তিন হাজার টাকা ভাড়া বাড়িয়েছেন বাড়ির মালিক। কিন্তু উপায়ান্তর না দেখে বাধ্য হয়েই থাকতে হচ্ছে। তবে বেতনের সাথে বাসা ভাড়ার মানিয়ে নিতে হাঁসফাঁস অবস্থা।

একই অবস্থা নগরীর পীরমহল্লা এলাকার বাসিন্দা সুফিয়া বেগমের। বলেন, গত এগারো বছর থেকে একই বাসায় ভাড়া থাকেন। পরিবারে তাঁর কোন পুরুষ মানুষ নেই। এতো দিন ভাড়া বাড়লেও তা খুব কম ছিলো। কিন্তু করোনাকাল পেরিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া বেড়েছে বাসার।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ অসংখ্য অজুহাত দেখিয়ে বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়িয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত আইন থাকলেও এটির প্রয়োগ না থাকায় খেয়ালখুশিমত ভাড়া আদায় করছেন বাড়িওয়ালারা।

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম বলেন, বাড়িভাড়া সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন থেকে এটি মনিটরিং করার কথা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় ভাড়াটিয়াদের অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে।

অপরদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বাড়িভাড়া সংক্রান্ত নীতিমালা দেখে আমাদের যা করণীয় আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’

উল্লেখ্য, সিলেট নগরীতে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষের বসবাস। যার প্রায় সত্তর শতাংশ ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।