গত রবিবার (১৪ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতাল থেকে রক্ত দিয়ে ইবনে সিনা পয়েন্ট থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে কদমতলী ওভারব্রিজের নিচে এসে নামেন সিলেট ভয়েস’র গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি ফাহিম আহমদ। সেখানে গাড়ির জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় একটি সিএনজি অটোরিকশা এসে তার কাছে গন্তব্য জানতে চান।
ফাহিম গোলাপগঞ্জে যাবার কথা বললে সিএনজি চালক একা কিনা জানতে চান। ফাহিম একা বলে জানালে গাড়িতে উঠে বসতে বলেন।
ফাহিম আহমদ গাড়ির সামনের সিটে উঠতে চাইলে চালক গাড়ির সামনের সিট ভাঙা বলে পিছনে উঠতে বলে। তখন তিনি পিছনের সিটে উঠে বসেন। সেখানে আগে থেকেই আরও দুই যাত্রী উঠে বসেছিলেন। গাড়িতে উঠার সময় ফাহিম আহমদের একটি ফোন হাতে ও অন্য একটি ফোন পকেটে ছিলো।
এরপর গোটাটিকর পয়েন্টে যাওয়ার একটু আগে সুন্দরবন সেন্টারের সামনে আসামাত্র সিএনজি অটোরিকশা চালক ফাহিম আহমদকে বলতে থাকে ১০টাকা ভাঙতি থাকলে পাশের সিটের যাত্রীকে দেওয়ার জন্য। তখন ফাহিম আহমদ ১০টাকার নোট পকেট থেকে বের করে ওই যাত্রীর হাতে দেন। গোটাটিকর পয়েন্টে যেতেই গাড়ির চালক গাড়ি থামিয়ে ফাহিম আহমদকে নামার জন্য বলেন। তখন তিনি বলেন, আমি তো গোলাপগঞ্জ যাওয়ার জন্য বলে উঠেছি। তখন চালক বলেন, ভাই আমি ভাবছি গোটাটিকর যাবেন।
তখন ফাহিম আহমদ গাড়ি থেকে নামলে ওই যাত্রী ১০টাকার নোট ফিরিয়ে দেন। সাথে সাথেই গাড়িটি সেখান থেকে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর ফাহিম পকেটে হাত দিয়ে দেখেন তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি নেই। গাড়ি থেকেই তার ফোন চুরি গেছে বলে ধারণা ফাহিমের।
এমন ঘটনা হর হামেশাই ঘটছে এই সড়কে। প্রায় এক মাস আগে ঠিক এমনই ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ি ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামের জাবেদ আহমদ। তবে ফাহিম আহমদের ফোন চোর চক্র নিয়ে গেলেও জাবেদ আহমদের ফোন তারা নিতে পারেনি।
জাবেদ আহমদ বলেন, ‘বান্দ (ওভারব্রিজ) থেকে গোটাটিকর পয়েন্ট আসা মাত্র চালক আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়৷ তখন নামার সময় আমি পকেটে হাত দিয়ে দেখি মোবাইল নেই। তৎক্ষনাৎ গাড়ির সিটে চোখ পড়ে। সাথে সাথে মোবাইল ফোনটি নিতে চাইলে পাশের সিটের ব্যাক্তি তার হাতে থাপ্পড় মারে। কিন্তু মোবাইল ফোনটি চোর চক্র নিয়ে যাতে পারেনি।’
গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার কামিল আহমদ নামে আরেকজনের সাথেও ঘটে এমন ঘটনা। তার পকেট থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে চাইলে সিএনজি অটোরিকশার ভিতরেই পিছনের সিটের দুজনের সাথে তার ধস্তাধস্তি হয়। তখন মোবাইল নিতে না পেরে চোর চক্রের সদস্যরা তাকে ধাক্কা দিয়ে সুন্দরবন সেন্টারের সামনে ফেলে চলে যায়।
এদিকে ঠিক একই জায়গা থেকে ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের মুন্না আহমদ নামে একজন সিএনজি অটোরিকশায় উঠেন। শ্রীরামপুর আসার আগেই সিএনজি অটোরিকশায় থাকা একজন তার পেটে ছুরি ধরে তার সাথে থাকা বাসা ভাড়ার নগদ প্রায় ৪০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।
স্থানীয় কয়েকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, চোর চক্র মূলত একা মানুষকে টার্গেট করে। এরপর নির্দিষ্ট জায়গায় না নিয়ে গোটাটিকর পয়েন্টে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। এই সময়ের মধ্যেই অভিনব কায়দায় তারা গাড়িতে উঠা ব্যাক্তির কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র।
এব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ সুপার (সুপারনিউমারারি) ও মিডিয়া কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, এরকম অভিযোগ পাইনি, তবে এধরণের চোর চক্রসহ মাদককারবারীদের ধরতে আমাদের পুলিশ সদস্যরা সবসময়ই তৎপর। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়াটা সহজ হয়।
তিনি ভুক্তভোগীদের পুলিশে তথ্য দিয়ে সহায়তার পাশাপাশি চোর চক্রকে ধরতে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হবে বলেও জানান।