সিলেটে আইনের তোয়াক্কা না কর অবাধে টিলা কাটা হচ্ছে। এর ফলে গত ১৫ বছরে সিলেটের ১০২৫ টি টিলার মধ্যে ধ্বংস হয়েছে ৪৬০টি টিলা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আয়োজিত ‘প্রকৃতি, পরিবেশ ও জনস্বার্থে পাহাড়/টিলা সংরক্ষণের গুরুত্ব: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় ২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রদন্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানানো হয় যে টিলা কাটার কারণে এই সময়ের মধ্যে অন্তত ৫১ জন মানুষ নিহত হয়েছেন, অজস্র বন্যপ্রাণী হারিয়েছে আবাসস্থল, ধ্বংস হয়েছে প্রকৃতি-প্রতিবেশ।
রবিবার সিলেট নগরীর একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়্ এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হোসাইন মো. আল-জুনায়েদ।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রাসেলুর রহমান ও পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক মোহাম্মদ ফেরদৌস আনোয়ার। সভার সভাপতিত্ব করেন বেলা সিলেটের কো-অর্ডিনেটর হাসানুল বান্না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতারের স্বাগত বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আলোচনা সভা শুরু হয়।
মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, এসএ রেকর্ড অনুযায়ী সিলেটে ২০০৯ সালে টিলার সংখ্যা ছিল ১০২৫ টি আর বর্তমানে এটা এসে পৌঁছেছে মাত্র ৫৬৫ টি তে। এই তথ্য বিশ্লেষণ করলেই অনুধাবন করা যায় কতখানি আইনের সফল বা কঠোর প্রয়োগ হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘টিলা মূলত ধ্বংস হয় সরকারি উদ্যোগ, ব্যক্তি উদ্যোগ, শিল্প প্রতিষ্ঠান, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, আইন প্রয়োগের অভাবে। টিলাকে পাথর কোয়ারী হিসেবে ইজারা প্রদান করা হচ্ছে সরকারিভাবে। যার কারণে আর রক্ষা করা যাচ্ছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘সিলেটের চা-শিল্পেও প্রভাব পড়ছে টিলা কাটার কারণে। যার কারণে এখন চা-শ্রমিকদেরও আয় কমে যাচ্ছে। একাধিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যক্তি স্বার্থের প্রাধান্য ও প্রলম্বিত আইনি প্রক্রিয়ার কারণে এই টিলা কাঁটা থামানো যাচ্ছে না।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হোসাইন মো. আল-জুনায়েদ বলেন, ‘টিলার যে সংখ্যা দেওয়া হয়, সেটা একটা পরিসংখ্যান। এটা একেবারে ফেইস টু ফেইস ভিত্তিতে না। প্রতিদিনই টিলা কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা এটা রক্ষা করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘টিলায় কৃষি কাজ হলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। এতে করে টিলাগুলো যেরকম সুরক্ষিত থাকে, এত করে ভাঙ্গন হয় না। কিন্তু, সিলেটে কৃষিকাজের কথা বলেই টিলা কাঁটা হচ্ছে। আমরা যদি কোনো একটা টিলাকে টার্গেট করে একটা ম্যানেজমেন্ট হিসেবে দেখতে পারি। আমরা এতে করে যদি কোনো সুফল পাই, তাহলে বড় করে কাজ করতে পারি।’
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ কাউসার, অ্যাডভোকেট মুহিত লাল ধর, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব, সাজিদুর রহমান, শাবিপ্রবির শিক্ষক ড. শফিকুল ইসলাম, ব্লু-বার্ড স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নাসিমা চৌধুরী, সিলেট সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুল ইসলাম, জৈন্তাপুরের এটিএম বদরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট কামাল হোসেইন, ড. প্রফেসর তাহমিনা ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইকবাল সিদ্দিকী, সত্যজিৎ কুমার দাস, জৈন্তাপুরের নাজমুল ইসলাম, সাংবাদিক সাদিকুর রহমান সাকি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান, আইডিয়ার সহকারী পরিচালক নাজিম আহমদ, নাসির উদ্দিন আহমদ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদউল্রাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুর কবির, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, শাবিপ্রবি শিক্ষক আবুল কাশেম উজ্জল প্রমুখ।