ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কার্যত ভেঙে পড়েছে। ঘটনার দিন সোমবার (৫ আগস্ট) উত্তেজিত জনতা সিলেটের পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে শুরু করে থানা ও পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পুলিশি কার্যক্রম ভেঙে পড়ায় নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে পুরো সিলেট। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরদিন মঙ্গলবার থেকেই সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনার নিরাপত্তা এবং সড়কের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নেমে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
ভেঙে ফেলা বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষত পরিষ্কারেও নেমে যায় ছাত্রছাত্রীরা। আগুনে ঝলসে যাওয়া স্থানে রঙ তুলিতে আঁকা হয় বিভিন্ন আলপনা। সোমবার (১২ আগস্ট) ৬দিন পর সড়কের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ নামলেও সরে যায়নি শিক্ষার্থীরা। দিনভর ট্রাফিক পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সাথে কাজ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের এসব ইতিবাচক কাজ প্রশংসা কুড়াচ্ছে সর্বমহলে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলেও পরবর্তীতে সেটি রূপ নেয় এক দফা দাবিতে। এরপর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে তোপের মুখে পড়ে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকার পতনের পর উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অচল হয়ে পড়ে গোটা দেশ। সিলেটে উত্তেজিত জনতা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে হামলা চালায়। এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সংস্কার থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট পরিষ্কারেরও দায়িত্ব নেয় শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন হাট-বাজার মনিটরিং ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজও শুরু করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
সংখ্যালঘুদের উপর হামলার আশঙ্কায় বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা পাহারা দেয় শিক্ষার্থীরা। সিলেটের সবখানেই যেন শিক্ষার্থীদের বিচরণ। ইতিবাচক কাজে প্রশংসায় ভাসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
সোমবারও নগরীর আম্বরখানা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজারসহ বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে দিনভর কাজ করেন একদল শিক্ষার্থী। রাস্তা পারাপারেও সহায়তা করছেন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবাই তাদের এমন কাজে আনন্দিত।
অনেক ব্যবসায়ীরাও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। খাবার, পানীয়, শরবত, ফলসহ নানা খাবার বিলিয়ে দিচ্ছেন রাস্তায় কর্তব্যরত শিক্ষার্থীদের মাঝে। তাদের ধারণা এতে শিক্ষার্থীদের মনোবল আরও বৃদ্ধিপাবে। তারা আরও উৎসাহিত হবেন।
খাবার-পানীয় দিয়ে সহযোগীতা করতে আসা আব্দুল মতিন নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীরা (শিক্ষার্থী) আমরার দেশর সম্পদ। তারা খতো সুন্দর খরি ট্রাফিক পুলিশোর কাম (দায়িত্ব পালন) খররা। আমরা খুব খুশি তারার এমন কামে। আমরা চাই সমসময় তারা অলান দেশোর মানুষর কামে আগাইয়া আইতা।’
শিক্ষার্থীদের কাজের প্রশংসা করে পথচারী মিনহাজ উদ্দীন নামের একজন বলেন, ‘সরকারের এমন পতনে সরকারি সকল খাত বিশেষ করে ট্রাফিক পুলিশ তাদের কর্তব্য থেকে দূরে থাকায় শিক্ষার্থীরা যেভাবে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করছে আমরা খুবই গর্বিত। আমি চাই আমার ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে ওদের মতো দেশকে গড়ুক। দেশের প্রতিটি জায়গায় আমাদের শিক্ষার্থীরা বিচরণ করুক। এতে তাদের মাঝে দায়িত্ববোধ বেড়ে ওঠবে।’
এ প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গত কয়েকদিনের কার্যক্রম অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তারা অনেক পরিশ্রম করে সড়ক নিয়ন্ত্রণ করেছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরেও বৃষ্টিতে ভিজে অনেক শিক্ষার্থীকে সড়কে কাজ করতে দেখা গেছে। যদিও ট্রাফিকের কাজে কিছুটা অসংঙ্গতি ছিল, কিন্তু তারা দেখিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা সব পারে। এজন্য আমি তাদেরকে সাধুবাদ জানাই।’