সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুৎ স্টেশন এলাকা বন্যাকবলিত হওয়া ঠেকাতে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি অবলোকন করে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণে সিলেট জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেন। শুক্রবার (১৭ জুন) সকাল থেকে সেখানে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে।
কুমারগাঁও বিদ্যুৎ স্টেশন থেকে ন্যাশনাল পাওয়ার গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এখানে সরবরাহ বন্ধ হলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট দেখা দেবে। পাশাপাশি সিলেট অঞ্চল পুরোটা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দেবে। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত হওয়ায় সিলেট নগরীর একাংশ ও সুনামগঞ্জ জেলা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় পড়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যে সকল যন্ত্রপাতি রয়েছে, সেগুলো বন্যাকবলিত হয়ে পড়লে পুনরায় মেরামত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এজন্য কোনোভাবে যেন পানি না ঢোকে সেই ব্যবস্থা করার কাজ চলছে।
এ ব্যাপারে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এই মুহূর্তে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি কুমারগাঁও বিদ্যুৎ স্টেশনকে। আর ৫/৬ ইঞ্চি পানি বাড়লে এই কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলে গোটা সিলেট বিভাগের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এমনটি হলে কার্যত সিলেট বন্যার ক্ষতির পাশাপাশি বড় ধরনের সংকটে পড়বে।
মেয়র বলেন, গত রাত থেকে এই সংকট মোকাবিলায় আমি প্রশাসনের সকল বিভাগ ও শাখার সহযোগিতা চেয়েছি। সিটি কর্পোরেশনের, জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কুমারগাঁও বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্যার কবল থেকে বাঁচাতে কাজ শুরু করেছে। এখানে আমার সাথে সিলেটের জেলা প্রশাসক, সেনা কর্মকর্তাসহ সকল দপ্তর ও সংস্থার কর্তারা আছেন। আমরা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও মাটি দিয়ে সুরমা নদীর পানি যাতে কেন্দ্রে না ঢুকতে পারে তার জন্য অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ শুরু করেছি।
সিসিক মেয়র জানান, বাঁধ নির্মাণ হলেই সিসিকের সাকার মেশিন দিয়ে কুমারগাঁও স্টেশনের ভেতরের পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু করব। আশা করছি সকলে সহযোগিতায় সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারলে বড় ধরনের সংকট থেকে রক্ষা পাবো।
এদিকে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতিতে নানা সংকট তৈরি হয়েছে। একদিকে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। নগরের দক্ষিণ সুরমা ও উপশহর এলাকায় বিদ্যুতের সাব-স্টেশনে পানি ঢুকে যাওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন দুর্ভোগে পড়া পানিবন্দি মানুষ।
পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার ও আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা সর্বাত্মকভাবে কাজ করছেন। মেয়র জানিয়েছেন, টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে নগরের পানিবন্দি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জরুরি বৈঠক করা হবে। এ পরিস্থিতিতে কন্ট্রোল রুম খোলার প্রক্রিয়া চলছে।
কুমারগাঁও বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনে সিসিক মেয়রের সাথে ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সেনা কর্মকর্তাগণ, সিসিকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তারা।