সিলেটে বাসদের সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিল

বাসদ (মার্কসবাদী)’র ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও মহান রুশ বিপ্লবের ১০৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার উদ্যাগে শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার আহ্বায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়ের সভাপতিত্বে কোর্ট পয়েন্টে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের জেলা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েব, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক তামান্না আহমেদ, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা প্রসেনজিৎ রুদ্র ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সঞ্জয় কান্ত দাস। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা কমিটির নেতা মোখলেসুর রহমান।

সমাবেশে বক্তারা বলে, বাংলাদেশ আজ ভয়াবহ সংকটের সম্মুখীন। একদিকে প্রবল অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে চলছে ফ্যাসিবাদী শাসন। বাংলাদেশে গত অর্ধশতাব্দী ধরে চলা পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থা আজ এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা। একদিকে মুষ্টিমেয় কয়েকজন পুঁজিপতির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে দেশের বেশিরভাগ সম্পদ, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, ছাঁটাই চলছে।

তারা বলেন, পত্রিকায় এসেছে, বর্তমানে খাবার কিনতে হিমশিম খাওয়া মানুষের হার ৬৮ শতাংশ। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন সিলেট ও বরিশাল বিভাগের মানুষ। সরকার ও সরকারদলীয় লোকজন, আমলা, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, লুটপাট, সম্পদ পাচার ও তথাকথিত উন্নয়নের ফলে আজ দেশে ত্বরান্বিত হয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। এর ফলাফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

বক্তারা বলেন, দেশে চলমান বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বহাল রাখতে শাসকগোষ্ঠী দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। গত ১৪ বছর ধরে চলছে আওয়ামী শাসন। সমস্ত রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কাঠামোকে চূড়ান্ত দলীয়করণ করা হয়েছে। নূন্যতম অর্থে সুষ্ঠু নির্বাচনের আর কোনো পরিবেশই এখানে অবশিষ্ট নেই। এমনকি স্থানীয় নির্বাচনও সুষ্ঠু হচ্ছে না। এ অবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি প্রায় সকল দলেরই। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সরকার নির্বিকার। বরং বিরোধী চিন্তা, মত দমনেই তারা সিদ্ধহস্ত। গুম, খুন, বিনা বিচারে হত্যা ইত্যাদি চলছে। রাজনৈতিক চর্চার বদলে আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনের যোগসাজশে চলছে দেশ। এই ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।

বক্তার আরও বলেন, গোটা বিশ্বে আজ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ব্যর্থ। মানুষকে কোনোরকমে বেঁচে থাকার ন্যুনতম রসদটুকুরও নিশ্চয়তা দিতে পারছে না এই ব্যবস্থা। অথচ আরেকদিকে ১ ভাগ মানুষের হাতে বিপুল সম্পদ জড়ো হয়েছে। অসাম্য, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ছাড়া এই ব্যবস্থা মানুষকে কিছু দিতে পারে না। কিন্তু আজ থেকে ১০৫ বছর আগে রাশিয়ায় শ্রমজীবী মানুষের নেতৃত্বে যে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই ব্যবস্থা দেখিয়েছে কিভাবে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা যায়, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শোষণ থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়া যায়, বেকার সমস্যা দূর করা যায়। তাই আজ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রমজীবী গরিব মানুষ, কৃষক, ক্ষেতমজুরদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমাজতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হবে। বাসদ(মার্কসবাদী) শ্রমজীবী মানুষদের নিয়ে সেই লড়াই করছে। আগামীদিনের সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

সমাবেশ শেষে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও লাল পতাকাসহ সুসজ্জিত মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিশু পার্কের সামনে গিয়ে শেষ হয়।