মাত্র কয়েক ঘন্টার ভারি বর্ষণে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল সিলেটজুড়ে। বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে নদনদীর পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি তলিয়ে যায় সিলেট নগরীর অধিকাংশ এলাকাও। হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবেছিল বাসা-বাড়ি। এ অবস্থায় সোমবার (১৭ জুন) সকালে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় ও কোরবানির পশু জবাই করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে পানি কিছুটা নেমে গেলেও ফের সিলেট অঞ্চলে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। একই সঙ্গে উজানেও ভারি বর্ষণ হতে পারে। এতে বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে নদনদী পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেই সাথে চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
সোমবার (১৭ জুন) বেলা তিনটায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ। তিনি বলেন, আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়, আগামী ২৪ হতে ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে এবং আগামী ৪৮ হতে ৭২ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
তিনি বলেন, ভারি বর্ষণের কারণে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, সোমেশ্বরী, যাদুকাটা, ঝালুখালি, মনু-খোয়াই নদীসমূহের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কিছু পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তাছাড়াও মৌলভীবাজার জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সোমবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত সিলেটের তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এরমেধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ও সারিগোয়াইন নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তাছাড়াও সুরমা, কুশিয়ারা, লোভা, ডাউকি ও ধলাইসহ সবকটি নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিনঘন্টায় ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরআগে গতকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ১৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
অন্যদিকে, পাউবো গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে ৩৬৫ মিলিমিটার, সিলেটে ২৮৫ মিলিমিটার, জাফলংয়ে ২৫২ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জের লরের গড়ে ২২৮ মিলিমিটার, সিলেটের লাটুতে ১৭৫ মিলিমিটার, মৌলভীবাজারের বড়লেখা দখিনাবাগে ১৬২ মিলিমিটার, সিলেটের কানাইঘাটে ১৩৭ মিলিমিটার, জকিগঞ্জে ১৩৩ মিলিমিটার, ও লালাখালে ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
পাউবো আরও জানায়, সিলেট অঞ্চল ছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উজানে চেরাপুঞ্জিতে ১২৬, শিলিগুড়িতে ১২৬ দশমিক ৮, কোচবিহারে ৯২, গোয়াহাটিতে ৭০, শিলচরে ৬৮ ও আসামে ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে সে দেশটির আবহাওয়া অফিস।
এর আগে রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ভারি বর্ষণে তলিয়ে গেছে সিলেট নগরীর অধিকাংশ এলাকা। এতে ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে যায় নগরবাসীর। অনেকের বাসা-বাড়িতে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি দেখা গেছে। রাস্তাঘাটও কোমর সমান পানিতে ডুবে ছিল।
ভারি বর্ষণে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, দরগামহল্লা, পায়রা, সুবিদবাজার, বনকলাপাড়া, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, কাজলশাহ, মেডিক্যাল রোড, বাগবাড়ি, কালীবাড়ি, হাওলাদারপাড়া, সোবহানীঘাট, উপশহর, যতরপুর, তেরোরতন, সোনারপাড়া, কেওয়াপাড়া, সাগরদিঘিরপার, পাঠানটুলা, মিয়া ফাজিলচিশত, জালালাবাদ, হাউজিং এস্টেট, শাহী ঈদগাহ, ঘাসিটুলা, হাওয়াপাড়া, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, জামতলা ও তালতলা এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। রাস্তাঘাট কোথাও হাঁটু পর্যন্ত, কোথাও কোমর পর্যন্ত ডুবে ছিল।
এ অবস্থায় সোমবার (১৭ জুন) সকালে ঈদুল আযহার জামাতে ঈদগাহ ময়দানে যেতে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। যার কারণে সিলেটের শাহী ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতে মানুষের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। অনেকে হাঁটু সমান পানি মাড়িয়ে পাড়া-মহল্লার মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
এদিকে, জলাবদ্ধতায় বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কোরবানীর পশু জবাই করা নিয়ে বিপাকে পড়েন মানুষজন। অনেকে উচু এলাকায় গিয়ে পশু জবাই করে বাসা-বাড়িতে নিয়ে যান
অবশ্য বেলা বাড়ার সাথে সাথে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নেমে যায়। ফলে নগরবাসীর জীবনযাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক হয়।