আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানোসহ ৫ দফা দাবিতে গণআন্দোলন গড়ে তেলার আহ্বান জানিয়ে সিলেটে বাসদ’র (মার্কসবাদী) গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার উদ্যাগে শনিবার (১৮ মার্চ) সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নগরীর সিটি পয়েন্টে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাক্ষর সংগ্রহকালে উপস্থিত ছিলেন, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার আহ্বায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক তামান্না আহমেদ, সদস্য রুবাইয়াৎ আহমেদ, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মোখলেছুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ রুদ্র ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সঞ্জয় কান্ত দাস।
সমাবেশে বক্তারা বলে, বাংলাদেশ আজ ভয়াবহ সংকটের সম্মুখিন। একদিকে প্রবল অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে চলছে ফ্যাসিবাদী শাসন। বাংলাদেশে গত অর্ধশতাব্দী ধরে চলা পুজিঁবাদী শাসন ব্যবস্থা আজ এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে শ্রমিক-কৃষক মেহনতি মানুষের জীবনে নামিয়ে এনেছে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা। একদিকে মুষ্টিমেয় কয়েকজন পুজিঁপতির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে দেশের বেশিরভাগ সম্পদ, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারি, ছাটাই চলছে। পত্রিকায় এসেছে, বর্তমানে খাবার কিনতে হিমশিম খাওয়া মানুষের হার ৬৮ শতাংশ। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন সিলেট ও বরিশাল বিভাগের মানুষ। সরকার ও সরকারদলীয় লোকজন, আমলা, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, লুটপাট, সম্পদ পাচার ও তথাকথিত উন্নয়নের ফলে আজ দেশে ত্বরান্বিত হয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। এর ফলাফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
তারা বলেন, দেশে চলমান বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা ও তার রাজনীতি ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বহাল রাখতে শাসকগোষ্ঠী দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। গত ১৪ বছর ধরে চলছে আওয়ামী শাসন। সমস্ত রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কাঠামোকে চূড়ান্ত দলীয়করণ করা হয়েছে। নূন্যতম অর্থে সুষ্ঠু নির্বাচনের আর কোনো পরিবেশই এখানে অবশিষ্ট নেই। এমনকি স্থানীয় নির্বাচনও সুষ্ঠু হচ্ছে না। এ অবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি প্রায় সকল দলেরই। কিন্তু কে শুনে কার কথা? সরকার নির্বকার। বরং বিরোধী চিন্তা, মত দমনেই তারা সিদ্ধহস্ত। গুম, খুন, বিনা বিচারে হত্যা ইত্যাদি চলছে। রাজনৈতিক চর্চার বদলে আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনের যোগসাজশে চলছে দেশ। এই ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
পাঁচ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই স্বাক্ষর সংগ্রহ সারাদেশে চলছে। দাবিগুলো হলো- ১. অবিলম্বে সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার ও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা; ২. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, সর্বজনীন রেশনিং ব্যবস্থা ও অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্যের রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু করা; ৩. শ্রমিকদের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা করা, সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে খাদ্যশস্য ক্রয় করা, কৃষিঋণ মওকুফ ও কৃষিখাতে ভর্তুকি বাড়ানো; ৪. শিক্ষা-চিকিৎসা নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করা, স্নাতক পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালু ও সবার জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা এবং ৫. অব্যাহত নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ-অপহরণ-হত্যা বন্ধ করা।