সিলেটে পহেলা বৈশাখের যতো আয়োজন

আজ পহেলা বৈশাখ। স্বাগত বাংলা নববর্ষ ১৪৩০। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যোগ হলো নতুন বছর। পয়লা বৈশাখ সকল সঙ্কীর্ণতা, কূপমণ্ডূকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। বাঙালির মনের ভেতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণে মধ্যে এই স্বজাত্যবোধ ও বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।

পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ নতুন বছরকে নানা আয়োজনে স্বাগত জানাতে সারা দেশের মতো সিলেটেও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে মাহে রমজানের কারণে দিনের আয়োজন সংক্ষিপ্ত করেছে বেশিরভাগ সাংস্কৃতিক সংগঠন।

জেলা প্রশাসনঃ

শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ ১৪৩০ উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, সিলেট বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় শহিদমিনার হয়ে কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের মুক্তমঞ্চ পর্যন্ত বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা, সকাল ১০টায় কবি নজরুল অডিটরিয়ামের মুক্তমঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা ৬টা ১৮ মিনিটে (ইফতারের সময়) সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার, সকল হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার/ইফতারের আয়োজন, সুবিধাজনক সময়ে কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান/কারাবন্দিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি প্রদর্শন।

এছাড়া বিভাগীয় গণ-গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন, রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতাঅনুষ্ঠিত হবে এবং দিনব্যাপী জাদুঘর ও সকল পার্ক (ওসমানী জাদুঘর, হাসন রাজা জাদুঘর, শেখ হাসিনা শিশু পার্ক, ড্রিমল্যান্ড, ওসমানী শিশু উদ্যান ও এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড) সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ঃ

বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উদযাপন উপলক্ষ্যে পহেলা বৈশাখ, ১৪৩০ (১৪ এপ্রিল), শুক্রবার সকাল ১১টায় ক্যাম্পাসে এক বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করবে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও রয়েছে আরও নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

শ্রুতি সিলেটঃ

আবহমান বাংলার ঐতিহ্য বাংলা নতুন বর্ষকে বরণ করতে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি-সিলেট প্রতিবারের মতো এবারো আয়োজন করেছে ‘শ্রুতি বর্ষবরণ উৎসব-১৪৩০ বাংলা’।

পহেলা বৈশাখ ১৪৩০, ১৪ এপ্রিল শুক্রবার ব্লুবার্ড স্কুল এন্ড কলেজের সুবিদবাজারস্থ প্রাথমিক ক্যাম্পাসে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলবে এই বর্ষবরণ উৎসব। অর্ধদিবস ব্যাপী আয়োজনে থাকবে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক আয়োজন। এ আয়োজনের প্রথমেই থাকবে সপ্তসুরে আহ্বান, থাকবে সম্মেলক পরিবেশনা, একক পরিবেশনা।

সমবেত সংগীত এবং নৃত্য পরিবেশন করবেন অনুষ্ঠান আয়োজক শ্রুতি-সিলেট, নৃত্যশৈলী, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ সিলেট, গীতবিতান-বাংলাদেশ, ছন্দনৃত্যালয়, সুরের ভূবন, সংগীত নিকেতন, ললিত মঞ্জরী, নৃত্যসুধা, নৃত্যরথ, পাঠশালা প্রমুখ। এতে শ্রুতির পক্ষ থেকে সবার উপস্থিতি কামনা করা হয়েছে।

আনন্দলোকঃ

রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘আনন্দলোক’ নগরীর কেওয়াপাড়াস্থ শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজন করছে ‘বর্ষবরণ উৎসব ১৪৩০’। উৎসব উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস। উৎসবে সংগীত-নৃত্য পরিবেশন করবে- বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা, সিলেট শাখা, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, গীতবিতান বাংলাদেশ, সুরাঞ্জলি, চারুবাক, নৃত্যশৈলী। উৎসব চলবে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত।

চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রঃ

নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন উদযাপন করবে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এ উপলক্ষ্যে সকাল ৯টায় সিলেটের চৌহাট্টাস্থ ভোলানন্দ নৈশ উচ্চবিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠনটি।

পাঠশালাঃ

পয়েলা বৈশাখ সকাল ৮.৩০ মিনিটে শিশুদের মঙ্গল শোভাযাত্রা করবে পাঠশালা ও সুবর্ণযাত্রা। কবি নজরুল অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গণ থেকে এই শোভাযাত্রা শুরু হবে। তারপর, শ্রুতির বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে পাঠশালার পরিবেশনা রয়েছে।

চা শ্রমিকঃ

নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতিবছর ভিন্ন স্বাদের আয়োজন করে চা শ্রমিক। পহেলা বৈশাকে এবারো তারা ‘চড়কপুজার’ আয়োজন করেছে। লাক্কাতুরা মাঠে বেলা ৩ টায় চড়ক পূজা শুরু হয়ে শেষ হবে বিকাল ৫ টায়।

এছাড়া জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সকাল সাড়ে ৯টায় কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের মক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এদিন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেট জেলা শাখা সকাল ৯ টায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে। পাশাপাশি বর্ণাঢ্য আরও নানা আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবে সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।