বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় বক্তারা বলেছেন, সিলেটে বিভাগের পরিবেশ বিপর্যয় মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে। মাধবপুর থেকে শুরু হওয়া বেপরোয়া শিল্পদূষণ, সিলেটে সামাজিক বনায়নের নামে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস, খনিজ সম্পদ আহরনের নামে জাফলং ভোলাগঞ্জ, লোভাচড়া, বিছনাকান্দির প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করা হচ্ছে। উন্নয়নের নামে হাওরের জীববৈচিত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট ধ্বংসের কারণে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য গ্রামে কৃষি, মৎস্য ও বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জীবনমানের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে নগরীর মিরবক্সটুলাস্থ একটি অভিজাত হোটেলের সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, দখল-দূষণের কারণে সিলেট বিভাগের প্রতিটি শহর এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে খাল, ছড়া, নদী ও বিল বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ব্যপক বায়ুদূষণ লক্ষণীয়। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় পাহাড়-টিলা অবাধে কাটা হচ্ছে। ভরাট করা হচ্ছে পুকুর, দিঘিসহ বিভিন্ন জলাশয়।
এ অবস্থায় সিলেটের জনজীবন ও পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক জনসম্পৃক্ত নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পরিবেশবাদীরা।
বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ জেলার প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংগঠকরা অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন।
সভায় সিলেটের জলাবদ্ধতা বিষয়ে একটি গবেষণাধর্মী বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন) এর বৈশ্বিক সমন্বয়ক ও যুক্তরাষ্ট্রের লক হ্যাভেন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মো. খালিকুজ্জামান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সিলেটের ছড়াগুলো ভরাট ও দখল এবং সুরমা নদীর একাংশ ভরাট হয়ে যাওয়া সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। অবিলম্বে নির্মোহভাবে নগরীর সমস্ত ছড়া, খাল ও নদী পুনরুদ্ধার ও পুনঃখনন করে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, পরিবেশ আন্দোলনে নাগরিকদের উৎকণ্ঠা ও সমর্থন ব্যক্ত করতে আগামী ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট আঞ্চলিক শাখার সভাপতি জামিল আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক, সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আবদুল করিম কিমের সঞ্চালনায় বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ও বাপার জাতীয় কমিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক শাকিল, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসিনা বেগম চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আলী আকবর এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর রেজাউল হাসান (কয়েছ লোদী)।
এছাড়া বক্তব্য দেন, বাপা সিলেটের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহীন, বাপার আদিবাসী পরিবেশ বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব ফ্লোরা বাবলি তালাং, সুনামগঞ্জ বাপার প্রস্তাবিত কমিটির আহ্বায়ক দেওয়ান সামারীন রাজা, হবিগঞ্জ বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সৈয়দ, বাপা মৌলভীবাজার জেলার সদস্য সচিব শিব প্রসন্ন ভট্টাচার্য, পরিবেশ সংগঠক ও সাংবাদিক নেতা শাহজাহান চৌধুরী, বাসিয়া বাঁচাও আন্দোলন এর সভাপতি মো. ফজল খান, বালুচরে ওরাও জনগোষ্ঠীর সম্পত্তি রক্ষা আন্দোলনের নেতা মিলন ওরাও ও হবিগঞ্জের শিল্প বর্জ্য দূষণ বিরোধী আন্দোলনের নেতা মোহাম্মাদ আব্দুল কাইয়ুম।
বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় বাপা সিলেটের সহ-সভাপতি ডা. মোস্তফা শাহ জামান চৌধুরী বাহার, কোষাধ্যক্ষ ছামির মাহমুদ, যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুদীপ্ত অর্জুন, যুগ্ম-সম্পাদক গৌরাঙ্গ পাত্র, সদস্য ফকির জাকির হোসেন সোহেল, সদস্য আলমগীর আলম শাহান, মোজাহিদ হোসেন মুনিম, মাহমুদুর রহমান চৌধুরী ওয়েছ, অ্যাডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী লিটন, শাকিলা আক্তার ববি, প্রকাশক রাজীব চৌধুরী, পরিবেশ সংগঠক সহকারী অধ্যাপক নাসরিন হক, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার কামরুল ইসলাম, সৈয়দ ফখরুল হোসেন, শামীম কবির, শাহবুদ্দিন আহমদ, দেওয়ান তাছাদ্দুক রাজা ইমন, মাহবুবুল ইসলাম, মো. শামীম মিয়া, নিগাত সাদিয়া, আবিদুর রহমান রাকিব, আমিনুল ইসলাম, পুলক কান্দি ধর, ক্যাশব শ্যাম, অলক শ্যাম, গউছ মঈনুদ্দিন হায়দার, লিটন চৌধুরী, হাসান আহমদ রাজা, টলবী লামিন, রানা সুরং, কুটলি ধর, ওয়ানলি আমসে, লিসডামন হংজং, প্রসেনজিৎ রুদ্র, মুসলিম-মনিপুরি নেতা মো. আব্দুল খালেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।